খুব মনোজগ দিয়ে পড়লেই আশা করি আপনার সমাধান পাবেন ইনশাল্লাহ
নিয়মিত ভিটামিন এ খাচ্ছেন।ভুলে যান বাইরের ভিটামিনের কথা।খেয়ে নিন একটি কমলা রঙের গাজর।কারন একটি গাজর আপনাকে দিতে পারবে ভিটামিন এ ছাড়াও নানা উপকার।একে তাই বলা হয়ে থাকে "শক্তিশালী"খাদ্য উপাদান।শুধু' ভিটামিন এ ' ই পাওয়া যায় তাই নয়।গাজরের আছে নানাবিধ উপকার।
গাজর খেলে কি ত্বক ফর্সা হয়
এটি আপনাকে উপহার দেবে সুন্দর ত্বক থেকে শুরু করে ক্যান্সারের থেকে সুরক্ষাও।আসুন জেনে নিই একটি গাজর থেকে আপনি কি কি উপকার পাচ্ছেন।
গাজরের পুষ্টিগুণ
১. আগে গাজর না খেয়ে থাকলে এখন থেকেই শুরু করুন গাজর খাওয়া।কারন গাজর খেলে বৃদ্ধি পাবে আপনার দৃষ্টিশক্তি। এতে আছে বেটা ক্যারোটিন যা আমাদের লিভারে গিয়ে "ভিটামিন এ" তে বদলে যায়।যা পরে চোখের রেটিনায় গিয়ে পৌঁছিয়ে চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।সেই সাথে রাতের বেলায় অন্ধকারেও চোখে ভালো দেখার জন্য দরকারি এমন এক ধরনের বেগুনি পিগমেন্টের সংখ্যা বাড়িয়ে দিয়ে দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে সাহায্য করে গাজর।
২. গাজর যারা খান তাদের ক্যান্সারের ঝুঁকি কম থাকে।গাজরে আছে falcarinol এবং falcarindiol যা আমাদের শরীরে এন্টিক্যান্সার উপাদানগুলোকে রিফিল করে।তাই গাজর খেলে ব্রেস্ট,কোলন,ফুসফুসের eating carrots ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে।
৩. গাজর শুধু শরীরের জন্য ভালো তাই নয়,এটি আমাদের জন্য এন্টিএজিং উপাদান হিসেবে ও কাজ করে।এতে যে বেটা ক্যারোটিন আছে তা আমাদের শরীরের ভেতরে গিয়ে এন্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে আমাদের শরীরের ক্ষয়প্রাপ্ত সেলগুলোকে ঠিকঠাক করে যা সাধারণ মেটাবোলিজমের কারনে হয়ে থাকে। এছাড়া ও এটি এজিং সেলগুলোর গতি ধীর করে দিতে সাহায্য করে,ফলে আপনি ধরে রাখতে পারবেন আপনার যৌবনকে অধিক সময়ের জন্য।
গাজর কি ভিটামিন আছে
৪. সুন্দর ত্বকের জন্যও গাজর খেতে পারেন।এটা আপনার ত্বককে ভেতর থেকে সুন্দর করে তুলতে সাহায্য করবে।এর ভিটামিন এ ও এন্টিঅক্সিডেন্ট আপনার ত্বকের রোদেপোড়া ভাব দূর করবে।সেই সাথে ভিটামিন এ ত্বকের অযাচিত ভাঁজ পড়া,কালো দাগ,ব্রণ,ত্বকের রঙের অসামঞ্জস্যতা ইত্যাদি দূর করে আপনাকে সুন্দর হয়ে উঠতে সাহায্য করবে।
৫. এছাড়াও গাজর একটি ভাল এন্টিসেপ্টিক হিসেবে ও কাজ করে।এটি ইনফেকশন হওয়া থেকে রক্ষা করে।কোথাও কেটে গেলে বা পুড়ে গেলে সেখানে লাগিয়ে নিন কুচি করা গাজর বা সিদ্ধ করা গাজরের পেস্ট। আপনার ইনফেকশন হবার আশঙ্কা আর থাকবে না।
৬. এছাড়া গাজর বাইরে থেকেও ত্বকের অনেক উপকার করে।এটা ব্যবহার করতে পারেন ফেসিয়ালের উপাদান হিসেবে।
৭. হৃদপিণ্ডের নানা অসুখে গাজর খুব ভালো কাজ করে।এর ক্যারোটিনয়েডগুলো হৃদপিণ্ডের নানা অসুখের ঔষধ হিসেবে কাজ করে।যেসব খাবারে গাজরের এই উপাদান উচ্চমাত্রায় পাওয়া যায় সেসব খেলে হৃদপিণ্ডের রোগের ঝুঁকি অনেক কমে আসে।
৮. গাজরে উপস্থিত ভিটামিন এ লিভারে গিয়ে শরীর থেকে নানা ধরনের টক্সিন জাতীয় খারাপ উপাদান পরিষ্কার করতে সাহায্য করে।এছাড়াও গাজরের এই উপাদানগুলো লিভার থেকে অতিরিক্ত চর্বি সরিয়ে ফেলতে সাহায্য করে।সেই সাথে গাজরের ফাইবার কোলন পরিষ্কার রাখে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের হাত থেকে আপনাকে রক্ষা করবে।
৯. সুন্দর ও সুস্থ সবল দাঁত চান? তবে এখনি গাজর খাওয়া শুরু করুন।গাজর আপনার দাঁত ও মুখগহ্বর পরিষ্কার রাখে।গাজর মুখের প্ল্যাক ও খাবারের উপাদান মুখ থেকে দূর করে টুথপেস্ট ও টুথব্রাশের মতোই।এছাড়াও গাজরের মিনারেলগুলো দাঁত মজবুত থাকতে সাহায্য করে অনেকাংশেই।
১০. হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় দ্বারা পরিচালিত এক সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে যে,যারা সপ্তাহে ৬টির বেশি গাজর খেয়েছেন বা খাচ্ছেন তাদের স্ট্রোকের ঝুঁকি,যারা এর থেকে কম পরিমাণে বা একটি গাজর খাচ্ছেন তাদের তুলনায় অনেক কম রয়েছে।তাই স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে হলে এখনি নিজের খাবারের তালিকায় যুক্ত করুন গাজর।
সঠিকভাবে গাজর খেলে লিভার ভালো থাকে।সেইসাথে লিভারের প্রদাহ,ফোলাভাব এবং লিভারের যেকোন সংক্রমণ ভালো হয়ে যায়।লিভারের হেপাটাইটিস সিরোসিস সমস্যা থেকে রক্ষা করতে পারে গাজর।কাচা গাজরের সঙ্গে দুই কোয়া রসুন ব্লেণ্ড করে খেলে উচ্চ রক্তচাপ কয়দিনের ভেতরে নিয়ন্ত্রণে আসে।কেউ যদি গাজরের স্যুপ করে খেতে পারেন,তাহলেও এই উপকার পাবেন।গাজরের স্যুপ খেলে ডায়রিয়া ভালো হয় এবং কৃমি নাশ হয়।গাজর খেলে ফুসফুসের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায় এবং শ্বসনতন্ত্রের বিভিন্ন সমস্যা,যেমন-হাঁপানি,একজিমা,ব্রঙ্কাইটিস এসব রোগ প্রতিরোধ করে।ঠান্ডাজনিত যেকোন রোগ খুব দ্রুত দূর হয়ে যায় গাজর খেলে।
জানা হয়ে গেল গাজরের নানা উপকারিতার কথা।একটু ভালো থাকার জন্য আমরা কতকিছু ই না করি।যদি একটি খাদ্য উপাদান আমাদের দৈনন্দিন খাবারের তালিকায় যোগ করে নিজেদের আরো একটু ভালো রাখতে পারি তাহলে তা
কেন করবো না।
এবার জেনে নেওয়া যাক,প্রতিদিন গাজর কতটুকু ও কিভাবে খেলে এর উপকার পাওয়া যাবে।
গাজর ছয়মাস পরবর্তী যেকোন শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পযর্ন্ত খেতে পারেন। এজন্য গাজর খাবার পরিমাণ ভিন্নরকম হবে।পূর্ণবয়স্ক একজন ব্যক্তি ৭০-১০০গ্রাম পযর্ন্ত গাজর প্রতিদিন খেতে পারবেন। এজন্য মাঝারি আকৃতির একটি গাজরই যথেষ্ট।ছয়মাসের একটি শিশুর জন্য গাজরের একটি বা দুটি টুকরোই যথেষ্ট। এর বেশি পরিমাণ গাজর খাওয়া কিন্তু শরীরের জন্য মোটেই ভালো নয়।গাজর সিদ্ধ করে এবং কাচা খাওয়া যায়।
আবার গাজরের স্যুপ করেও খাওয়া যায়।সিদ্ধ মানে একেবারে সিদ্ধ করে খেতে হবে।তবে গাজর যদি অনেকক্ষণ রান্না করে খান তাহলে কিন্তু গাজরের পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যাবে।তাই গাজর খাবার উওম পন্থা হলো কাচা খাওয়া বা শুধুমাত্র সিদ্ধ করে খাওয়া।
গাজরের অপকারিতা
গাজরেরও কিছু ক্ষতিকর দিক রয়েছে।প্রথম কথা হলো,গাজর কিডনি রোগে খাওয়া যাবেনা।কিডনি রোগে যারা আক্রান্ত হয়েছেন তাদের রক্তে ক্যারোটিনের পরিমাণ এবং ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা অনেক বাড়িয়ে দেবে গাজর।ডায়াবেটিস রোগীদের গাজর খাওয়ার ব্যাপারে সাবধান হতে হবে।গাজর যেহেতু মিষ্টিজাতীয় খাবার,তাই কাচা বা সিদ্ধ যেভাবেই খান না কেন,গাজরের এই মিষ্টির কারনে ডায়াবেটিস কিন্তু অনেকগুণ বেড়ে যাবে। ডায়াবেটিস রোগীরা
গাজর খেতে চাইলে একদিনে ৪০-৫০গ্রামের বেশি খাওয়া যাবেনা।বারবার পরিমাণের কথা উল্লেখ করছি।
কারন গাজর বেশি পরিমাণ খেলে পাকস্থলীর পাচনজনিত ব্যাধি দেখা দিতে পারে।এমনকি অন্ত্রের ক্যান্সার হতে পারে।কারন গাজরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে বিটা ক্যারোটিন,যা পাকস্থলীর ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি করে।এমনকি গ্যাস,পেটফাপা,ডায়রিয়া,বদহজম এইসব সমস্যাগুলো দেখা দেয় গাজর বেশি পরিমাণে খাওয়ার ফলে।বেশি গাজর খেলে
রক্তচাপ বেড়ে যায় এবং অনিদ্রা বা ঘুমের সমস্যা দেখা দেয়।পরিমাণের চেয়ে বেশি গাজর খেলে দেহে ম্যাগনেসিয়াম, আয়রণ,ক্যালসিয়াম,দস্তা ইত্যাদি খনিজগুলো শোষনে সমস্যা হয়।ফলে দেহ অপুষ্টিতে ভোগে।যেসব নারীরা বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়াছেন,তাদের জন্য গাজর খাওয়া ভালো।কিন্তু যদি বেশি পরিমাণে খান,তাহলে বুকের দুধের স্বাদ পরিবর্তন হয়ে যায় এবং এর কারনে শিশুর পেটব্যথা ও পেট খারাপের মত সমস্যা হতে পারে।
গাজরে থাকা বিটা ক্যারোটিন শরীরের জন্য খুব ভালো।কিন্তু
গাজর বেশি খাওয়ার ফলে এই বিটা ক্যারোটিনের প্রভাবে ত্বকে হলুদ কমলা রঙের ছাপ পড়তে পারে এবং ত্বকের পিগমেন্টটেশন হতে পারে।
তাই আশা করছি,গাজর আপনি জেনেবুঝেই খাবেন আর ততোটুকুই খাবেন যতোটুকু আপনার শরীরের জন্য উপকারী।
0 Comments