খুব মনোজগ দিয়ে পড়লেই আশা করি আপনার সমাধান পাবেন ইনশাল্লাহ
আমাদের অনেকের মনে জাফরান নিয়ে অনেক প্রশ্ন থাকে। এই যেমন- জাফরান কি, জাফরান খেলে কি কি উপকার পাওয়া যায়, গর্ভাবস্থায় জাফরান খেলে বাচ্চার গায়ের রং ফর্সা হয় কিনা,জাফরান কোথায় পাওয়া যায় ইত্যাদি ইত্যাদি।
জাফরান কি - জাফরান হচ্ছে একটি মশলা।বানিজ্যিক জগতে জাফরানকে "রেড গোল্ড" নামেও ডাকা হয়। এটি "কেশর" নামেও পরিচিত। এটি ওজনের মধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান মসলার মধ্যে অন্যতম।বেশিরভাগ জাফরান ভারতের কাশ্মীরে জন্মায়। এটি গ্রীসে প্রথম চাষ করা হয়েছিল।জাফরান ইরানেও চাষ করা হয়। ইরানী জাফরান তুলনামূলক দামি হয়।কারন ইরানী জাফরান অন্যদেশের জাফরানের তুলনায় অধিক মানসম্পন্ন হয়।তুরস্ক,পাকিস্তান, ইতালি,স্পেনসহ ইউরোপ ও এশিয়ার প্রায় বিশটি দেশে জাফরান চাষ করা হয়।জাফরান হচ্ছে একটি সপুষ্পক উদ্ভিদের প্রজাতি।এক অজানা কারনে জাফরান ফল তৈরী করতে পারেনা।যার ফলে জাফরানের বংশবিস্তারের জন্য মানুষের সাহায্যের প্রয়োজন হয়।জাফরান ফুলের পাপড়ি বেগুনি রঙের হয়। এর ভেতরে থাকে
লম্বা পরাগদণ্ড।এই দণ্ডের রং হলুদ এবং কমলার মিশ্রণে জাফরানি বর্ণের হয়।পরিণত ফুল শুকালেই এর পরাগদণ্ড মসলা হিসেবে ব্যবহার হয়।।জাফরান প্রতিকেজির মূল্য তিন থেকে চার লাখ টাকা।
জাফরানের দাম বাংলাদেশ
বাংলাদেশের বাজারে একগ্রাম জাফরান ২৫০-৫০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়।বিরিয়ানিতে রঙের জন্য এটি ব্যবহার করা হয়।খাদ্যদ্রব্য ছাড়াও দামি প্রসাধনসামগ্রী হিসেবে জাফরান ব্যবহার করা হয়।প্রাচীনকালে জাফরান গায়ে মাখা হতো, শরীরের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির জন্য। এছাড়া নানা রোগেও জাফরানের বহুমাত্রিক ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।যেকোন খাবারেই জাফরান ব্যবহার করলে খাবারের স্বাদ ও রঙ দুটোই বৃদ্ধি পায়।
জাফরানের গুনাগুন
এবার জেনে নেওয়া যাক জাফরানের অসাধারণ ১০টি গুণাগুণ।
১. নার্ভের কার্যকারিতায় : জাফরানের মধ্যে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স প্রচুর পরিমাণে থাকে।যা নার্ভের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে।
২. মানসিক চাপ থেকে : জাফরান আমাদের Endocrine
System কে নিয়ন্ত্রন করে, যার ফলে বিভিন্ন হরমোনগুলির বিক্রিয়া নিয়ন্ত্রিত হয়। এর ফলে মানসিক চাপ ও বিষন্নতা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
৩. ফুসফুসের রোগে: ফুসফুসঘটিত রোগ, অ্যাজমা, কফ,ঠাণ্ডা লাগা দূর করতে জাফরান ব্যবহার করুন।
৪. রক্ত সঞ্চালনে: জাফরান আমাদের মেটাবলিজমকে উন্নত করে এবং রক্ত সঞ্চালন নিয়ন্ত্রণ করে।যার ফলে হৃদরোগ ভালো হয়।
৫. পাকস্থলীর কার্যকারিতায় : জাফরানের মধ্যে ভিটামিন সি থাকে যা Nutrient গুলোকে শরীরের মধ্যে Absorbe করতে সাহায্য করে এবং পাকস্থলীর কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে।
৬. অনিদ্রার সমস্যায় : ঘুমোতে যাওয়ার আগে গরম দুধে সামান্য জাফরান মিশিয়ে পান করলে অনিদ্রার সমস্যা দূর হয়।
৭. জাফরান অ্যালজাইমার এবং পার্কিনসন রোগ থেকে দূরে রাখে এবং অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে
বাঁচায়।
৮. জাফরানের মধ্যে ক্যালসিয়াম থাকে।Osteoporosis এবং বিভিন্ন বয়সজনিত রোগ নিয়ন্ত্রণে জাফরান ব্যবহার হয়।
৯. গা,হাত,পা ব্যথা করলে জাফরানের সাথে দুধ মিশিয়ে খাওয়ার পরামর্শ দেন ডাক্তাররা।
১০. জাফরান পরিপাকে সাহায্য করে।
সেক্স পাওয়ার বাড়ানোর জন্য জাফরান ১০০% কার্যকরী।
ত্বকের যত্নে দুধ ও জাফরান
একগ্লাস দুধে ৫-৬ টি জাফরান ব্যবহার করুন।খুব বেশি ব্যবহার করবেননা।জাফরান দিয়ে দুধ খেলে অ্যাসিডিটির পরিমাণ কমে যায়।সামান্য কাচা হলুদ দিয়ে দুধ ফুটিয়ে নিয়ে তাতে সামান্য জাফরান মিশিয়ে খেলে বয়সের ছাপ দূর হবার পাশাপাশি ,গায়ের রঙ উজ্জ্বল হয়। আর ত্বকটা ভেতর থেকেই উজ্জ্বল হবে।
ক্যান্সার কোষকে ধ্বংস করে জাফরান
নিয়মিত জাফরান মিশানো দুধ খেলে তা
ক্যান্সার প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে।
শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টের ব্যাথায়,
চুলের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধিতেও জাফরান দুধ উপকারী।
সেক্স বাড়াতেও জাফরান দুধ উপকারী।
জাফরান যেকোন খাবারের সঙ্গে দ্রুত মিশে যায়। এতে এমন এক ধরণের ক্যারোটিন থাকে, যাকে ক্রোসিন বলা হয়। এই ক্রোসিনের কারনেই জাফরান খাবারে ব্যবহার করলে একটা উজ্জ্বল সোনালী রঙ হয়। এই ক্রোসিন শুধুমাত্র খাবারে উজ্জ্বল রঙই আনেনা, আমাদের শরীরের বিভিন্ন ধরণের ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করতেও সাহায্য করে।একলক্ষ পঞ্চাশ হাজার ফুল থেকে এককেজি জাফরান চব্বিশ ঘণ্টার ভিতরে তুলে নিতে হয়।
এই জাফরান কোন প্রকার মেশিনের সাহায্যে ফুল থেকে নেওয়া যায় না।ফুল ফোটার সঙ্গে সঙ্গে চব্বিশ ঘণ্টার ভেতর জাফরান না তুলতে পারলে জাফরান নষ্ট হয়ে যাবে।তাই অনেক কষ্ট করে এই জাফরান তুলতে হয়। এই কারনে জাফরানের দাম এতো বেশি।
জাফরানের ঔষধি গুণ
সৃষ্টিকর্তা জাফরানের ভেতরে অনেক ঔষধী গুণ দিয়ে রেখেছেন। জাফরান খেলে ক্যান্সার থেকে দূরে থাকা যায়।বহুদিনের পুরনো পাইলস এর সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এলার্জিজনিত চুলকানি বা দাদ দূর করতে পারে জাফরান।ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় জাফরান সেবনে।জণ্ডিসের মহৌষধ হিসেবে কাজ করে।
চুলের যত্নে জাফরান
অল্পবয়সীরা চুলপড়া বন্ধ করতে পারবেন আজীবনের জন্য,
এই জাফরান দেওয়া দুধ নিয়মিত খেয়ে।একটি করে জাফরান একচামচ মধু দিয়ে খেয়ে নিবেন ,যারা ক্যান্সার হবার ঝুঁকি ও পাইলসের সমস্যা দূর করতে চাচ্ছেন।একচামচ কালোজিরার সঙ্গে দুইটি জাফরান খেতে পারলে,যারা এলার্জিজনিত চুলকানি ও দাদের সমস্যায় ভুগছেন,তারা মুক্তি পাবেন।সাতদিনের মধ্যে এলার্জি বা দাদ ভালো হয়ে যাবে।
গর্ভাবস্থায় একজন নারীর শারীরিক ও মানসিক সুস্বাস্থের এক বিশাল পরিমাণে রূপান্তর হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।জাফরান গর্ভাবস্থায় দূর্দান্ত।কারন এটি ইতিবাচক আবেগকে উৎসাহ দেয় এবং কিছু ঔষধি গুণাবলি ধারণ করে। যা গর্ভাবস্থায় লক্ষণগুলোর সঙ্গে মোকাবেলায় সাহায্য করে থাকে। জাফরান উদ্বেগ, অবসাদ,পেট ব্যথার অনুভূতিগুলোর মোকাবেলায় সহায়তা করে।প্রায় গর্ভবতী মহিলাদেরকে এর বহু গুণাবলির জন্য খাওয়ার সুপারিশ করা হয়।গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়া নিরাপদ।কারন এর রয়েছে অনেক ঔষধিগুণ। এটি গর্ভাবস্থায় নানা সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে সহায়তা করে।
জাফরানের আপকারিতা
তবে প্রচুর পরিমাণে গ্রহন করলে জাফরানেরও কিছু বিরূপ প্রভাব দেখা যায়। এটি সংকোচনের সূত্রপাত এবং অকাল প্রসবের কারনও হতে পারে।তাই ডায়েটে জাফরান যুক্ত করার আগে কিছু সর্তকতা মনে রাখা উচিত।গর্ভধারণের পর পঞ্চম মাস শুরু হলে, তবেই শুধুমাত্র জাফরান গ্রহন করুন।কারন এই সময় গর্ভাবস্থা স্থিতিশীল থাকে এবং অকাল প্রসবের ঝুঁকি ও হ্রাস পায়।যেকোন রান্না এবং খাবারে জাফরানের মাত্র দুটি কি তিনটে সুতা ব্যবহার করুন।কারন অতিরিক্ত জাফরান আপনার স্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।জাফরান একজন উচ্চমানের বিক্রেতা থেকেই নেওয়া উচিত।নয়তো কৃত্রিম রঙযুক্ত নকল জাফরান খেয়ে অসুস্থ হবার আশঙ্কা থাকে।
রূপচর্চায় জাফরান
রূপচর্চায় জাফরানের ব্যবহার: - যেকোন ক্রিমের সঙ্গে জাফরান গুড়ো করে মিশিয়ে ত্বকে লাগালে,ত্বকের দাগছোপ দূর করার পাশাপাশি ত্বক খুবই উজ্জ্বল হয়। এভাবে রাতে ত্বকে লাগিয়ে সারারাত রাখলে ভালো ফল পাওয়া যায়। এলোভেরা জেলের সঙ্গে জাফরান গুড়া মিশিয়ে পায়ের গোড়ালি ফাটায় লাগালে,পা ফাটা দ্রুত সেরে যায়।
জাফরান দিয়ে রূপচর্চা
এলোভেরা জেলের সঙ্গে স্নো বা ক্রিম এবং জাফরান গুড়া মিশিয়ে ত্বকে লাগিয়ে সারারাত রাখলে,তা একটা মাস্কের কাজ করে। এটা ব্যবহারে অনেকটা মসৃনভাব চলে আসে ত্বকের মধ্যে।তাই খুব দামি মশলা হলেও এর উপকারিতাগুলোর কথা মাথায় রেখে জাফরান খাওয়া উচিত সবার।
,
0 Comments