ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে রোজা অন্যতম।পবিত্র রমজান মাসে মহান আল্লাহ্ তায়ালা সামর্থ্যবান সকল মুসলমানের উপর রোজা ফরজ করে দিয়েছেন।অনেকের ধারণা , রোজা রাখলে স্বাস্থ্য খারাপ হয়ে যায়।কিন্তু আল্লাহ্ তায়ালা তার বান্দার কল্যাণের জন্যই রোজা বাধ্যতামূলক করে দিয়েছেন।আসুন জেনে নিই,স্বাস্থ্য বিজ্ঞানের মতে রোজা রাখার কয়েকটি উপকারিতা।
মোটা ব্যক্তির জন্য: অতিরিক্ত খাবার গ্রহনের জন্য অনেকেই অনেক সমস্যায় ভুগছেন।তাই তো ইসলাম অতিরিক্ত খাবার গ্রহনের পক্ষে নয়। অতিরিক্ত খাবার গ্রহনের ফলে দেহে প্রচুর চর্বি জমে যায়।ফলে শরীর অস্বাভাবিক মেটা হয়ে যায়।যা স্বাভাবিক জীবনযাপনকে ব্যাহত করে।এসব চর্বি চামড়ার নিচে,শিরা উপশিরা এমনকি হৃদপিণ্ডে জমা হতে পারে।এর কারনে শরীরে স্বাভাবিক রক্ত চলাচল করতে পারেনা।কিন্তু রোজা রাখলে শরীরের এসব জমে থাকা চর্বি শরীরের কাজে ব্যবহৃত হয়,ফলে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক হয়।
উচ্চ রক্তচাপ,হৃদরোগ ও হাঁপানি রোগীদের জন্য রোজা উপকারী: রোজা রাখার ফলে শরীরে ক্ষতিকর ফ্যাট এর মাত্রা কমে যায়।ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেক কমে যায়।রোজা রাখলে স্ট্রেস হরমোন কম নিঃসরন হয়।এর ফলে বিপাকক্রিয়া ও শরীরে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেড়ে যায়।রোজা রাখার ফলে মনের অশান্তি ও দুশ্চিন্তা কমে যায়।
কাজের প্রতি মনোযোগ বেড়ে যায়। এটি উচ্চ রক্তচাপ রোগীদের জন্য খুবই ভালো। অধিকাংশ হাঁপানী রোগীর জন্য রোজা বেশ উপকারী।
ডায়াবেটিস রোগীর জন্য রোজা : যেসমস্ত ডায়াবেটিস রোগী
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে চাচ্ছেন,তাদের জন্য রোজা রাখা খুবই জরুরী।তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন হাইপো গ্লাইসেমিয়া না হয়ে যায়।যারা দুইবেলার অধিক ইনসুলিন গ্রহণ করে থাকেন তারা ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে রোজা রাখলে ভালো হয়।
আলসার রোগীদের জন্য রোজা : অনেক সময় দেখা যায় আলসারে আক্রান্ত রোগীরা রোজা রাখলে ভালো থাকেন।কারো কারো সমস্যা হতে পারে।তবে তাদের জন্য রোজা রাখার বিষয়টি অনুশীলনের উপর নির্ভর করে।
রোজা ধূমপান কমিয়ে দেয়: আমরা জানি ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এ কথা বর্তমান যুগে সবাই জানে।বিজ্ঞানের আবিষ্কারের অনেক আগে থেকেই ইসলাম ধূমপান নিষিদ্ধ করেছিল।ধূমপানের কারনে ফুসফুসের ক্যান্সার হতে পারে।রোজা রাখলে ওই সমস্ত লোক এটি থেকে বিরত থাকতে পারবেন।বলা যেতে পারে ধূমপান বর্জনের উপযুক্ত সময় হচ্ছে রমজান মাস।
স্বাস্থ্য গবেষকদের মতে,সারা বছর অতিরিক্ত খাবার,অখাদ্য,ভেজাল খাবার ইত্যাদি খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে জৈব বিষ জমা হয়। এটি শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।যদি আমরা পুরো একমাস সঠিকভাবে রোজা পালন করি তাহলে এসব বিষ শরীর থেকে দূর হয়ে যাবে।আমাদের শরীর হবে শঙ্কামুক্ত।
রোজা রাখার মাধ্যমে চেহারা ও চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা সম্ভব। যেহেতু রোজার সময় আমাদের পরিপাকতন্ত্র বিশ্রামে থাকে,তাই আমাদের লিভারের ডিটক্সিফিকেশন প্রক্রিয়াটা কিন্তু ভালোভাবে চলতে পারে।শরীরের বিষাক্ত পদার্থগুলো ধীরে ধীরে ধ্বংস হয়ে যেতে থাকে।আর আমাদের শরীরের অতিরিক্ত চর্বিগুলো যেহেতু খরচ হতে থাকে,তাই চেহারায় একধরণের মাধুর্য্য ফুটে উঠতে থাকে এবং চুলের সৌন্দর্য ও বৃদ্ধি পায়।
প্রতিবছর কোটি কোটি মুসলমান রোজা রাখেন সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পযর্ন্ত পানাহারে বিরত থেকে।গত কয়েকবছর ধরে উওর গোলার্ধের দেশগুলোতে রোজা পড়েছে গ্রীষ্মকালে।ফলে এসব দেশের মুসলমানদের রোজা রাখতে হচ্ছে গরমের মধ্যে অনেক দীর্ঘ সময় ধরে।ধরা যাক, নরওয়ের কথা।এখানে এবছর মুসলিমদের প্রায় বিশঘণ্টা সময় ধরে রোজা রাখতে হবে।একজন মুসলমান একমাস ধরে রোজা রাখলে তার শরীরে কি প্রভাব পড়ে আসুন তা জেনে নিই।
প্রথম কয়েকদিন সবচেয়ে কষ্টকর।শেষবার খাবার খাওয়ার পর আটঘণ্টা পার না হওয়া পযর্ন্ত কিন্তু একজন মানুষের শরীরের উপর সে অর্থে রোজার প্রভাব পড়েনা।আমরা যে খাবার খায় পাকস্থলীতে তা পুরোপুরি হজম হতে এবং এর পুষ্টি শোষণ করতে ৮ ঘণ্টা সময় নেয় শরীর।যখন এই খাদ্য পুরোপুরি হজম হয়ে যায়,তখন আমাদের শরীর যকৃত এবং মাংসপেশিতে সঞ্চিত থাকে যে গ্লুকোজ তার থেকে শক্তি নেওয়ার চেষ্টা করে।শরীর যখন এই চর্বি খরচ করতে শুরু করে,তা আমাদের ওজন কমাতে সাহায্য করে।এটি কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় এবং ডায়াবেটিস এর ঝুঁকি ও কমায়।তবে যেহেতু রক্তে সুগার বা শর্করার মাত্রা কমে যায়
এই কারনে হয়তো কিছুটা দূর্বল ও ঝিমুনির ভাব আসতে পারে।এছাড়া কারো কারো ক্ষেত্রে মাথা ঘোরা, মাথা ব্যথা,বমিবমিভাব বা নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ হতে পারে।এসময়টাতেই আসলে শরীরে সবচেয়ে বেশি খিদে লাগে।তিন হতে সাত রোজা পযর্ন্ত , পানিশূন্যতা থেকে সাবধান।প্রথম কয়েকদিনের পর আপনার শরীর যখন রোজায় অভ্যস্ত হয়ে উঠছে, তখন শরীরের চর্বি গলে গিয়ে রক্তে শর্করায় পরিনত হচ্ছে।কিন্তু রোজার সময় যখন দিনেরবেলায় আপনি কিছু ই খেতে বা পান করতে পারছেননা, তাই রোজা ভাঙ্গার পর আপনাকে প্রচুর পানি পান করে শরীরের পানির ঘাটতি পূরণ করতে হবে।নইলে আপনি মারাত্মক পানিশূন্যতায় আক্রান্ত হতে পারেন।বিশেষ করে গরমের দিনে যদি শরীরে ঘাম হয়। আর যে খাবার আপনি খাবেন, সেটাতেও যথেষ্ট শক্তিদায়ক খাবার থাকতে হবে।যেমন- কার্বোহাইড্রেট বা
শর্করা এবং চর্বি।একটা ভারসাম্যপূর্ণ খাবার খুব গুরুত্বপূর্ণ।যেখানে সব ধরণের পুষ্টি, প্রোটিন বা আমিষ,লবণ এবং পানি থাকবে।
আট হতে পনেরো রোজা।অভ্যস্ত হয়ে উঠছে শরীর। এই পর্যায়ে এসে আপনি নিশ্চয় অনুভব করতে পারছেন যে,আপনার শরীর ও মন ভালো লাগছে।কারন রোজার সঙ্গে আপনার শরীর মানিয়ে নিতে শুরু করেছে।বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের মতে, এর অন্য সুফলও আছে।সাধারণত দৈনন্দিন জীবনে আমরা অনেক বেশি ক্যালরিযুক্ত খাবার খাই এবং এর ফলে আমাদের শরীর অন্য অনেককাজ ঠিক ভাবে করতে পারেনা।যেমন ধরুন শরীর নিজেই নিজেকে সারিয়ে তুলতে পারে।তাই রোজার সময় যেহেতু আমরা উপোস থাকছি,শরীর তখন অন্যান্য কাজের দিকে মনযোগ দিতে পারে।কাজেই রোজা কিন্তু শরীরের জন্য বেশ
উপকারী।রোজা শরীরের ক্ষত সারিয়ে তোলা এবং সংক্রমন রোধে সাহায্য করতে পারে।
ষোল হতে ত্রিশ রোজা মানে ভারমুক্ত শরীর।রমজান মাসের দ্বিতীয়ার্ধে আমাদের শরীর কিন্তু রোজার সঙ্গে পুরোপুরি মানিয়ে নেবে।আমাদের শরীরের পাচনতন্ত্র,যকৃত,কিডনি ও দেহত্বক এখন একধরণের পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে যাবে।সেখান থেকে সব দূষিত বস্তু বেরিয়ে গিয়ে আমাদের শরীর যেন শুদ্ধ হয়ে উঠে।বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের মতে,এসময় শরীরের অঙ্গপ্রতঙ্গ তাদের পূর্ণ কর্মক্ষমতা ফিরে পায়। আমাদের স্মৃতি এবং মনযোগের উন্নতি হয়।শরীরে শক্তিও বৃদ্ধি পায়।শরীরের শক্তি যোগানোর জন্য আপনার শুধুমাত্র আমিষের উপর নির্ভরশীল হওয়া ঠিক হবে না।যখন আপনার শরীর ক্ষুধার্থ থাকছে, তখন এটি শক্তির জন্য দেহের মাংসপেশিকে ব্যবহার করছে।আর এটি ঘটে,যখন একটানা বহুদিন বা কয়েক সপ্তাহ ধরে আপনি উপোস থাকছেন বা রোজা রাখছেন।যেহেতু রোজার সময় কেবল দিনেরবেলাতেই আপনাকে না খেয়ে থাকতে হয়,তাই আমাদের শরীরের চাহিদা মেটানোর জন্য যথেষ্ট খাবার এবং তরল বা পানীয় গ্রহনের সুযোগ থাকছে রোজা ভাঙ্গার পর। এটি আমাদের মাংসপেশিকে রক্ষা করছে এবং একইসঙ্গে আমাদের আবার ওজন কমাতেও সাহায্য করছে।বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা বলেন, রোজা রাখা শরীরের জন্য
ভালো।কারন আমরা কি খাই এবং কখন খাই সেটার উপর আমাদের মনযোগ দিতে সাহায্য করে।কারন আপনার শরীর তখন ক্ষুধায় ভুগবে। এক্ষেত্রে ডাক্তারদের পরামর্শ হচ্ছে, রমজান মাসের পর মাঝে মধ্যে অন্য ধরণের ডায়েট করা যেতে পারে।
যেমন-পাঁচদিন কম খেয়ে দুইদিন ঠিকমতো খাওয়া -দাওয়া করা।যেখানে কয়েকদিন রোজা রেখে তারপর স্বাস্থ্যসম্মতভাবে আবার খাওয়া - দাওয়া করা যেতে পারে।
তাই দেখা যাচ্ছে, রোজা রাখলে শারীরিক বিভিন্ন
উপকারিতার সঙ্গে সঙ্গে মহান আল্লাহ্ তায়ালার আদেশ ও পালন করা হবে।মহান আল্লাহ্ তায়ালা আমাদের ক্ষমা করে দিবেন। আসুন আমরা সবাই আল্লাহ্ তায়ালার বিধান মোতাবেক জীবন পরিচালনা করি,সুস্থ থাকি,আল্লাহ্ এর সান্নিধ্য লাভ করি।
0 Comments