আমরা সজিনার ডাটা খাই।কিন্তু সজিনার পাতার যে অসাধারণ গুণ আছে,আমরা তা জানি না।সজিনার পাতাকে বলা হয় সুপার ফুড আর গাছকে বলা হয় মিরাকেল ট্রি।আমাদের আশেপাশে একটি ডাল মাটিতে পুঁতলে যে গাছ হয়ে যায়,সেই সজিনার পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আজ জানবো। সজিনাকে বলা হয় পুষ্টি উপাদানের সুপার ফুড।
পৃথিবীর সবচেয়ে পুষ্টিকর হার্ব এটা।
১. কমলা ও লেবু থেকে সাতগুণ বেশি ভিটামিন সি আছে সজিনা পাতায়।
২. দুধের চেয়ে চারগুণ বেশি ক্যালসিয়াম এবং ডিম থেকে দুইগুণ বেশি প্রোটিন আছে সজিনা পাতায়।
৩. অন্ধত্ব দূরীকরণে ব্যাপক কার্যকরী।কারন গাজর থেকে চারগুণ বেশি ভিটামিন এ রয়েছে এতে।
৪. সজিনা পাতা এনিমিয়া প্রতিরোধ করে।কারন শাকের তুলনায় পঁচিশগুণ বেশি আয়রন রয়েছে এতে। ৫. কলা থেকে তিনগুণ বেশি পটাশিয়াম রয়েছে সজিনা পাতায়।
৬. এন্টি এজিং হিসেবে কাজ করে,হার্ট ভালো রাখে,উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট ডিফিসিয়েন্সি প্রতিরোধ করে।
৭. রক্তে সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে।
৮. কোলেস্টেরলের লেভেল কমায়।
৯. সজিনা পাতা হজমশক্তি বাড়ায়।কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
১০. এ্যাজমা রোগীদের ক্ষেত্রে সজিনা পাতা বিশেষ উপকারী।একটা গবেষণায় দেখা গেছে,৩ গ্রাম পাতা দুইবেলা তিন সপ্তাহ ধরে খেলে ভালো উপকার পাওয়া যায়।
এছাড়া শতবছর ধরে প্রায় ৩০০ রোগের ঔষধ হিসেবে সজিনার ব্যবহার হয়ে আসছে।সজিনার বীচিতে রয়েছে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল প্রোপারটিজ। এটা কিন্তু পানি বিশুদ্ধকরণে বিশেষভাবে কার্যকরী।ময়লা পানিকে পরিষ্কার করতে,এই সজিনার বীচিকে শুকিয়ে গুড়া করে ব্যবহার করা যায়।
১১. সজিনা ক্যান্সার কোষ বৃদ্ধি প্রতিরোধ করে।আবার স্তন্যদানকারী মায়েদের জন্য সজিনা পাতা অত্যন্ত উপকারী।
১২. কৃমিনাশক হিসেবে ব্যবহৃত হয় এই পাতা। সজিনা পাতায় রয়েছে ৯২ ধরণের পুষ্টি উপাদান।৪৬ ধরণের এন্টিঅক্সিডেন্ট,১৮ ধরণের অ্যামাইনো অ্যাসিড ও ৮ ধরণের প্রয়োজনীয় অ্যামাইনো অ্যাসিড।যে কারনে সজিনাকে বলা হয় পুষ্টিগুণে ভরপুর সুপার ফুড,ন্যাচারাল মাল্টিভিটামিন,পুষ্টির ডিনামাইট এবং মিরাকেলস ভেজিটেবল।
☆☆মরিঙ্গা বা সজিনা পাতার পাউডার তৈরির পদ্ধতি সজিনা পাতা গাছ থেকে তুলে নেবার পর সাধারণত একদিনের বেশি ফ্রেশ থাকেনা,চুপসে যায়।তাই চেষ্টা করতে হবে গাছ থেকে তুলে আনার পরই তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করতে।প্রথমে ডাল থেকে সব পাতা আলাদা করে নিতে হবে।
বেশি করে পাতা নিতে হবে।কারন যখন শুকিয়ে পাউডার ও চা পাতা তৈরী করা হবে তখন পরিমাণে অনেক কমে যাবে। পাতাগুলো হালকা হাতে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে।
সজিনা পাতার গায়ে কিন্তু পানি লাগেনা,এছাড়া সজিনা পাতাও বেশ পরিষ্কারই থাকে।তাই বেশি ধুতে হয় না।এবার পাতাগুলো রোদে শুকিয়ে নিতে হবে।তিন চারদিন রোদে দিলেই শুকিয়ে যাবে।ঘণ্টায় ঘণ্টায় পাতাগুলো নেড়ে চেড়ে দিতে হবে।
তাহলে সব পাতাই সমানভাবে শুকাবে।আর শুকানোটা কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ।পাতা ভালোভাবে না শুকালে পাউডার বা চা পাতা দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যাবে না।শুকানোর সময় সতর্ক থাকতে হবে যেন বালি বা কোন আবর্জনা উড়ে এসে না পড়ে।
এবার যতটুকু চা পাতা তৈরি করতে চাই,তার জন্য পরিমাণমতো শুকনো পাতা নিয়ে নিবো একটি পাত্রে।হাত দিয়ে পাতাগুলো যতটা সম্ভব গুড়া করে নিলেই তৈরী হয়ে যাবে সজিনার চা পাতা।বাকি শুকনো পাতাগুলো ব্লেন্ডারে দিয়ে মিহি গুড়ো করে নিলেই তৈরী হয়ে যাবে মরিঙ্গা বা সজিনার পাউডার।যা দুধ,শরবতসহ যেকোন খাবারে মিশিয়ে খাবারের পুষ্টিগুণ বৃদ্ধি করতে পারেন।
☆☆সজিনা পাতার ড্রিংক,মাত্র ১০ দিনে ৭ কেজি ওজন কমবে
আধাকাপ সজিনা পাতা ধুয়ে ব্লেণ্ডার করে নিতে হবে।এবার গ্লাসে ঢেলে হালকা উষ্ণপানি মিশিয়ে নিতে হবে।এতে দিতে হবে সামান্য হিমালয়ান পিংক সল্ট বা বীটলবণ বা এমনি লবন।সঙ্গে মিশিয়ে নিন অল্প মধু ও এক চামচ লেবুর রস।প্রতিদিন সকালে খালিপেটে খান।
দেখবেন খুব দ্রুত ওজন কমে গেছে।সঙ্গে অন্যান্য অনেক রোগ থেকেও মুক্তি পাবেন।
☆☆সজনে ডাঁটার উপকারিতা সজনে খুবই উপকারী একটি সবজি।এটি অনেকেরই পছন্দ।
এটি শুধু দেখতেই সুন্দর নয়,স্বাস্থ্য সুরক্ষার কাজেও প্রয়োজনীয়।বসন্তের শেষের দিকে সজনে ডাঁটা বাজারে ওঠে।
সজনের ডাল ও তরকারি অনেকের কাছেই একটি প্রিয় খাদ্য।এবার সজনে ডাঁটার উপকারিতাগুলো জেনে নিই চলুন।
১. সজনের ডাঁটায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে।যা এন্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে।তাই ঠাণ্ডা,জ্বর এবং কাশি দূর করতে সজনে ডাঁটার ডাল,তরকারি ও স্যুপ করে খেতে পারেন।এটি শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।অর্থাৎ শরীরকে শক্তিশালী করে তোলে।
২. সজনে ডাঁটা দেহের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।তাই উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য খুব উপকারী।
৩. হজম সমস্যা সমাধানে এই ডাঁটা উপকারী।পেটে গ্যাস হলে,বদহজম হলে এবং পেটে ব্যথা হলে সজনের তরকারি খেয়ে নিন।দেখবেন পেটের গোলমাল অনেকটাই কমে যাবে।
৪. মানুষের শরীরে চিনির সঠিকমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রেখে ডায়াবেটিসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে এই সজিনা।
তাই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সজিনা একটি উপকারী সবজি।
৫. সজনে ডাঁটায় প্রচুর পরিমাণে আয়রন,ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন থাকে।তাই এটি সুস্থ ও শক্তিশালী হাড় গঠনের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
৬. আমাদের শরীরের রক্ত বিশুদ্ধ করতেও সজনের কোন জুড়ি নেই।
৭. বসন্ত রোগ বা পক্স প্রতিরোধে সজনে ডাঁটার ডাল বা তরকারি রান্না করে খেলে জলবসন্ত ও গুটিবসন্তে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যায়।
৮. সজনে ডাঁটা ও পাতার রস খেলে শ্বাসকষ্ট সেরে যায়।
৯. সজনে ডাঁটায় থাকা প্রদাহবিরোধী এন্টিঅক্সিডেন্ট ভিটামিন সি এলার্জি প্রতিরোধ করে।ফলে এলার্জির কারনে যে শ্বাসকষ্ট হয় তা দূর করে।
১০. এই ডাঁটা লিভার ও কিডনি সুরক্ষিত রাখে এবং মুখে রুচি আনে।
১১. শরীরের বাড়তি ওজন কমাতে সাহায্য করে। তাই আমাদের সকলের উচিত খাদ্যতালিকায় সজিনার ডাঁটা ও পাতার তৈরী খাবার রাখা।
0 Comments