খুব মনোজগ দিয়ে পড়লেই আশা করি আপনার সমাধান পাবেন ইনশাল্লাহ
☆☆ভ্যানিল কি
ভ্যানিলা হচ্ছে একটি লতাজাতীয় গাছ।এর ফসল দেখতে সরু ও কিছুটা লম্বা।৬-৮ ইঞ্চি পযর্ন্ত লম্বা হয়ে থাকে।
ভ্যানিলা চাষ
এই ফসল থোকা হিসেবে গাছে ধরে।
ভ্যানিলা বীজ থেকে ও চাষ করা সম্ভব, আবার লতা কাটিং করেও চাষ করা সম্ভব।ফসলের কোয়ালিটির উপর এর দাম নির্ভর করে।ভ্যানিলা চাষ করতে হয় সম্পূর্ণ অর্গানিকভাবে। অনেকটা পানের চাষের মতো চাষ করতে হয়।সরাসরি সূর্যের আলো লাগানো যায় না গাছে।এর জন্য কেউ ছাউনি ব্যবহার করতে পারে,কেউ গ্রীণ নেটও ব্যবহার করতে পারে।এছাড়াও বিভিন্ন
ধরণের নেট পাওয়া যায়,যেগুলো দিয়ে চাষ করতে হয়।
ভ্যানিলা চাষ
এই চাষে অর্গানিক সার ব্যবহার করতে হয়।যেমন- কম্পোস্ট,গোবর,কেঁচোসার। এই চাষে তেমন কীটনাশকের
প্রয়োজন হয়না,কেননা গাছে কীটপতঙ্গের আক্রমণ খুব কম
হয়।ভ্যানিলা লাগানোর পর যখন ফসল হয় তখন প্রথম প্রথম কম পরিমাণে ফসল পাওয়া যায়।কিছুদিন পর থেকে ভালো রকম ফসল পাওয়া যায়।ফসল পেকে প্রায় পচে যাওয়ার আগ মুহূর্তে গাছ থেকে তুলে শুকিয়ে নিতে হয় ভালোভাবে।তারপর বিক্রি করা যায়।
☆☆ভ্যানিলা কেন এতো দামি
ফ্লেভার হিসেবে ভ্যানিলা বিশ্বে অন্যতম। আইসক্রিম,কেক থেকে শুরু করে সুগন্ধি পযর্ন্ত ভ্যানিলা ফ্লেভারের জুড়ি মেলা
ভার। আপনারা জানেন কী?এই ভ্যানিলা কোথা থেকে আসে
এবং কেন এতো মূল্যবান?
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভ্যানিলার দাম বেড়েছে প্রায় দশ গুণ। একটা সময় রূপার দামের চেয়ে ভ্যানিলার দাম বেড়ে যায়।
২০১৪ সালে ভ্যানিলার দাম ছিল প্রতি কেজি আশি ডলার। ৩ বছর পর তা দাঁড়ায় ৬০০ ডলার। আজকের দিনে
ভ্যানিলা প্রায় পাঁচশ ডলারের কাছাকাছি।বিশ্ববাজারে চাহিদার কারনে এই অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি পায়।
সারাবিশ্বে
প্রাকৃতিক খাবার গ্রহণের প্রবণতা বাড়ায় খাবার প্রক্রিয়াজাত
প্রতিষ্ঠানগুলো কৃত্রিম উপায় থেকে সরে এসেছে।ফলে ভ্যানিলার চাহিদা কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ৮০ শতাংশ ভ্যানিলা উৎপাদন হয় মাদাগাস্কারে।ওখানকার আবহাওয়া ও
জলবায়ু ভ্যানিলা উৎপাদনের অনুকূলে।
এটি ঐদেশের প্রাথমিক রপ্তানি ফসল।কিন্তু ভ্যানিলার দাম সবসময় খুবই
পরিবর্তনশীল। এক দুই সপ্তাহের মধ্যে দাম ২০ শতাংশ কমতে
পারে বা বেড়ে যেতে পারে।একসময় মাদাগাস্কার সরকার ভ্যানিলার দাম নির্ধারণ করে দিত।কিন্তু গত একদশকে মুক্তি
আন্দোলনের ফলে এখন ভ্যানিলার দাম বিক্রির সময় নির্ধারণ করা হয়।যার ফলে বাজারদর খুব ওঠানামা করে।
ভ্যানিলা শিল্প খুবই ছোট।মাদাগাস্কারের একটি সাইক্লোনই
যথেষ্ট পুরো ফসল ধ্বংস করার জন্য।ভ্যানিলার আঁশ খুবই
কঠিন ও সূক্ষ্ম।ভ্যানিলা হলো একপ্রকার অর্কিড,যা হাতের মাধ্যমে পরাগায়ন করতে হয়।প্রক্রিয়াটা খুবই সূক্ষ্ম এবং শ্রমিকদের প্রচুর সময় ব্যয় করতে হয়।
যারা অর্কিড চাষ করেন তারা বুঝতে পারবেন, এটাকে বাঁচিয়ে রাখা কতটা কঠিন।ছয়মাস লাগে এটি বড় হতে।কাটার পর প্রায় আরো ছয়মাস লাগে এটি প্রক্রিয়াজাত করতে।ভ্যানিলার একটি মজার ব্যাপার হচ্ছে, এটি গাছ থেকে কাটতে হয় যখন ফলটি প্রায় পচে যায়।
উৎপাদনকারীদের প্রায়ই একটা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।প্রায়ই চোরের আক্রমণ হয় বাগানগুলোতে।
এতে প্রচুর আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়।বাগানের শ্রমিকদেরই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হয়।কিছু ভ্যানিলা কৃষক ফল পেকে যাবার আগেই সংগ্রহ করে।
এতে ভ্যানিলার মান বজায় থাকে না এবং দাম পড়ে যায়।বড় কোম্পানিগুলো এখন সরাসরি ভ্যানিলা কৃষকদের
সঙ্গে কাজ করছে।ফলে মানের উপর আরো বেশি নিয়ন্ত্রণ বাড়ছে এবং কৃষকরা ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে।ভ্যানিলা উৎপাদনে মাদাগাস্কারের একক আধিপত্য থাকলে ও,অদূর ভবিষ্যতে এই কর্তৃত্ব তারা হারাতে পারে।বিভিন্ন দেশ ভ্যানিলা চাষে এগিয়ে আসছে,হয়তো অদূর ভবিষ্যতে ভ্যানিলা আমরা সুলভ মূল্যে পাবো।
☆☆ভ্যানিলা এসেন্স কিভাবে ঘরে তৈরী করতে হয়
যেকোন কেক এবং ডেজার্ট তৈরীতে ভ্যানিলা এসেন্স ব্যবহৃত হয়।
এক চা চামচ কফি ও এক চা চামচ চিনি নিবো একটি বাটিতে।কফি ও চিনির অনুপাত সবসময় সমান হতে হবে।এর
পর দিতে হবে চার চা চামচ হালকা কুসুম গরম পানি।
এবার
যতোক্ষণ চিনিটা না গলবে ততোক্ষণ পযর্ন্ত নাড়তে হবে চামচ দিয়ে। এবার তাতে দিতে হবে চা চামচের চারভাগের একভাগ
বেকিং সোডা।বেকিং সোডার বদলে বেকিং পাউডার ব্যবহার
করা যাবেনা।
এরপর অনবরত নাড়তে হবে।নাড়তে নাড়তে একসময় দেখা যাবে রঙ পরিবর্তন হচ্ছে এবং মিশ্রণটাতে
বুদবুদ তৈরী হয়েছে।যদি বেকিং সোডার বদলে বেকিং পাউডার ব্যবহার করা হয় তাহলে এভাবে বুদবুদ তৈরী হবেনা।
এবার মিশ্রণটা ঢেকে রেখে দিতে হবে দুইঘণ্টা।দুইঘণ্টা পর ঢাকনা তুলে দেখা যাবে বুদবুদ আর নেই।এভাবে তৈরী হয়ে গেল ভ্যানিলা এসেন্স। এবার একটি বোতলে রেখে ভালোভাবে ঢাকনা লাগিয়ে দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যাবে।
☆☆ভ্যানিলা এসেন্স কী? কি কাজে লাগে? ভ্যানিলা এসেন্স বা ফ্লেভারের দাম কত
ভ্যানিলা এসেন্স হলো একটি সুগন্ধি তরল।
কেক বা পুডিং বানাতে আমরা ভ্যানিলা এসেন্স ব্যবহার করে থাকি।বিভিন্ন ধরণের খাবারে ও আমরা ব্যবহার করি।ভ্যানিলা এসেন্স মূলত ডিমের করনেই ব্যবহৃত হয়ে থাকে।কেক,পুডিং তৈরী করতে ডিম লাগে।অনেকেই আছে যারা ডিমের গন্ধটা সহ্য করতে পারেনা।তাই এসব তৈরীতে দুই তিন ফোটা ভ্যানিলা এসেন্স ব্যবহার করা হয়। এসেন্স ব্যবহার করলে আর ডিমের গন্ধটা থাকে না।
যেকোন শপিংমল ও বড় মুদির দোকানে ভ্যানিলা এসেন্স পাওয়া যায়।২৮ গ্রামের দাম প্রায় সওর টাকা।
☆☆অর্গানিক ভ্যানিলা এসেন্স ঘরে তৈরির পদ্ধতি
আমাজন বা সুপার শপগুলোতে ভ্যানিলা ফলটা পাওয়া যায়।
দেখতে সরু ও লম্বা।অনেকটা বরবটির মতো। সেটা কিনে এনে ভ্যানিলা এসেন্স তৈরী করতে হয়।২০০ গ্রাম এসেন্স তৈরীর জন্য দুইটা ফলই যথেষ্ট।ফলটা ধুয়ে নিয়ে ধারালো ছুরি দিয়ে লম্বাভাবে ফলটা চিড়তে হবে।
ভেতরের সবগুলো কালো ছোট ছোট বীজ ছুরি দিয়ে টেনে একজায়গায় করতে হবে এবং একটা বাটিতে রাখতে হবে।এবার ফলের বাইরের খোসাটা টুকরো টুকরো করে নিতে হবে। একটা জীবাণুমুক্ত পাত্রে ফলের খোসার টুকরাগুলো ও বীজগুলো নিতে হবে।
১৫০গ্রাম গ্লিসারিন তাতে ঢালতে হবে।৫০ গ্রাম হালকা গরম
পানি দিতে হবে পাত্রে।এবার ভালোভাবে পাত্রের ঢাকনা বন্ধ করে ঝাকাতে হবে পাত্রটি।৫-৬ সপ্তাহ বয়াম বা পাত্রটি ঠাণ্ডা ও অন্ধকার জায়গায় রেখে দিতে হবে।
অন্যথায় এটি ব্যবহারের উপযুক্ত হবেনা।দৈনিক একবার পাত্রটি ভালোভাবে
ঝাকাতে হবে।
৫-৬ সপ্তাহ পর এটির রঙ পরিবর্তন হয়ে যাবে এবং এটি ব্যবহারের উপযুক্ত হবে।
☆☆ভ্যানিলা এসেন্স দিয়ে কেক তৈরী করতে আগে ভালোভাবে ফুটিয়ে তরল দুধ ঠান্ডা করে নিতে হবে।তারপর কেকে ব্যবহার করতে হবে। ভ্যানিলা এসেন্স মাত্র তিন চার ফোঁটা ব্যবহার করতে হয় কেকে।
0 Comments