খুব মনোজগ দিয়ে পড়লেই আশা করি আপনার সমাধান পাবেন ইনশাল্লাহ
কালোজিরা ইংলিশ নাম
কালোজিরাকে আমরা কে না চিনি।ইংরেজিতে কালোজিরা
Nigella seed নামে পরিচিত।
কালোজিরা ওষুধ
বাঙ্গালীর পাঁচফোড়ন থেকে শুরু করে সিঙ্গারা ও নানানরকম খাবারে কালোজিরা না হলে চলেই না।
আয়ুর্বেদিক, ইউনানী ও কবিরাজি চিকিৎসায়ও
কালোজিরার ব্যাপক ব্যবহার হয়ে থাকে।মশলা হিসেবেও এর
চাহিদা অনেক।
মৃত্যু ব্যতীত সকল রোগের ঔষধ কালোজিরা
ইসলাম ধর্মে কালোজিরার গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে বলা হয়েছে,তোমরা কালোজিরা ব্যবহার করবে।কেননা
এতে একমাত্র মৃত্যু ব্যতীত সর্বরোগের মুক্তি রয়েছে। এছাড়া
বিশ্বের সবচেয়ে পুষ্টিকর খাবার
বৈজ্ঞানিক গবেষণায় ও প্রমাণিত হয়েছে যে,কালোজিরা একটি সুপার ফুড। এতে মানবদেহের জন্য প্রয়োজনীয় সব পুষ্টির উপাদান রয়েছে।বিভিন্ন খাবারে ব্যবহার ছাড়াও কালোজিরার বীজ থেকে তেল পাওয়া যায়।যা মানব শরীরের
জন্য খুব উপকারী।
কালোজিরার বীজ ভর্তা করে খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়।
☆☆কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির খাবার
১. নিয়মিত কালোজিরা খেলে মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল বাড়ে।
যার ফলে স্মরণশক্তি বৃদ্ধি পায়।কালোজিরা প্রাণশক্তি বাড়ায়
এবং ক্লান্তি দূর করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে কোনটি
২. রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে কালোজিরা।
নিয়মিত কালোজিরা খেলে শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রতঙ্গ সতেজ থাকে। এতে করে যেকোন জীবানুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ
গড়ে তুলতে দেহকে প্রস্তুত করে তোলে এবং সার্বিকভাবে স্বাস্থ্যের উন্নতি করে।
প্রাকৃতিক ভাবে হজম শক্তি বৃদ্ধির উপায়
৩. হজমের সমস্যায় ১-২ চা চামচ কালোজিরা বেটে পানির সঙ্গে খেতে থাকুন। এভাবে প্রতিদিন দুই তিনবার খেলে একমাসের মধ্যে হজমশক্তি বেড়ে যাবে।পাশাপাশি পেটফাঁপা ভাবও দূর হবে।
জ্বর,ব্যথা,সর্দি কালিকিরা ভালো হয়
৪. জ্বর,ব্যথা,সর্দি-কাশিতে এক চা চামচ কালোজিরার সঙ্গে তিন চা চামচ মধুও দুই চা চামচ তুলসী পাতার রস মিশিয়ে দৈনিক একবার সেবন করলে দারুণ ফল পাওয়া যাবে।
মায়েদের বুকের দুধের বৃদ্ধি করার ১০০% কাযকারি
৫. মায়েদের বুকের দুধের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে প্রতিদিন রাতে শোবার আগে ৫-১০ গ্রাম কালোজিরা মিহি করে সেই গুড়ো দুধের সঙ্গে খেতে থাকুন।দশ থেকে পনেরো দিনের মধ্যে দুধের প্রবাহ বেড়ে যাবে।এছাড়া কালোজিরার ভর্তা করে ভাতের সঙ্গে খেলেও এই সমস্যার সমাধান হবে।
লিভার ক্যান্সার রোগীর খাবার
৬. কালোজিরা লিভার ক্যান্সারের জন্য দায়ী আফলাটক্সিন নামক বিষ ধ্বংস করে।তাই যারা লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত তারা আজ থেকে খেতে শুরু করে দিন।
৭. চুলপড়া রোধে কালোজিরা নিয়মিতভাবে খান।
এতে আপনার চুল পর্যাপ্ত পুষ্টি পাবে এবং চুলপড়া বন্ধ হবে। আর
ভালো ফলাফল পেতে কালোজিরার তেল চুলের গোড়ায় মালিশ করতে থাকুন।
৮. ডায়াবেটিস রোগীরা একচিমটি পরিমাণ কালোজিরা এক গ্লাস পানির সঙ্গে প্রতিদিন সকালে খালিপেটে খেয়ে দেখুন।এতে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকবে।একসময়
ডায়াবেটিস কমে যাবে।
৯. কালোজিরা যৌনব্যাধি ও স্নায়ু দূর্বলতায় আক্রান্ত রোগী
দের জন্য খুবই উৎকৃষ্ট ঔষধ। এটি নারী ও পুরুষ উভয়ের যৌন ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।বিশেষ করে পুরুষদের জন্য খুবই উপকারী।নিয়মিত কালোজিরা সেবনে পুরুষত্বহীনতা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
১০. চা বা গরম পানির সঙ্গে কালোজিরা তেল মিশিয়ে খেলে হৃদরোগে যেমন উপকার পাওয়া যায়,তেমনি শরীরের
বাড়তি মেদও কমে যাবে।
এছাড়া উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ,অরুচি,শরীর ব্যথা,গলা ও দাঁতের ব্যথা,মাইগ্রেন ও হাঁপানি নিরাময়ে কালোজিরা সাহায্য
করে।ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবে কালোজিরা সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
☆☆মধু ও কালোজিরা একসঙ্গে খেলে কি হয়
পাঁচ হাজার বছর আগের আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে,কালোজিরা ও মধুর উপকারিতা উল্লেখ করা হয়েছে।কিন্তু কালোজিরা ও মধুর ঔষধিগুণ পেতে গেলে আপনাকে ঔষধের মতোই সঠিকভাবে ও সঠিক পরিমাণে সেবন করতে হবে।
কালোজিরায় রয়েছে জীবাণু ধ্বংসকারী উপাদান। এই উপাদানের কারনে শরীরে সহজে সংক্রামক রোগ বা ছোঁয়াচে
রোগ হয়না।কালোজিরা হলো এন্টিবায়োটিক বা এন্টি এন্টিসেপটিক।আর মধুতে রয়েছে ৪৫ টির ও বেশি খাদ্যগুণ।
তবে মধুতে চর্বি ও প্রোটিন নেই।মধুর এন্টিমাইক্রোবিয়াল ও এন্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান দেহকে যেকোন সংক্রামক রোগ
থেকে রক্ষা করে।রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকগুণ বাড়িয়ে দেয়।মধুর আরো অনেক গুণের একটি হলো,মধু হাঁপানী ও শ্বাসকষ্ট কমাতে খুব দ্রুত কাজ করে এবং কালোজিরাতেও এই গুণ রয়েছে।
ঠাণ্ডাজনিত যেকোন অসুখ খুব দ্রুত সারিয়ে তুলতে পারে।কালোজিরা ও মধু যদি একসঙ্গে খাওয়া হয় তাহলে কি ঘটবে শরীরে?
নিয়মিত কালোজিরা ও মধু খেলে শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রতঙ্গ
সতেজ থাকে।যেকোন জীবানুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে দেহকে প্রস্তুত করে এবং সার্বিকভাবে স্বাস্থ্যের উন্নতি করে।যাদের ডায়াবেটিস আছে তারা কালোজিরার সঙ্গে মধু
খেতে পারবেন না।
মধু আর কালোজিরা একসঙ্গে খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।যৌনক্ষমতা বৃদ্ধি করে কালোজিরা ও মধু।অনিদ্রা দূর করতে ভালো কাজে আসে এই কালোজিরা ওমধুর মিশ্রণ।
প্রতিদিন সকালে কালোজিরার ২১টি বীজ এবং ১চামচ মধু
একসাথে মিশিয়ে সেবন করতে হবে।খালিপেটে সকালে পানি
পানের ত্রিশ মিনিট পরে এই মিশ্রণ সেবন করতে হবে।কালোজিরা খুব ভালোভাবে চিবিয়ে খাবেন। এই নিয়মে সকলেই খেতে পারবেন। একমাস পযর্ন্ত খেলেও কোন ধরণের
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হবেনা।তবে যদি শরীরে কোন ব্যথা থাকে,তবে
এই মিশ্রণ খাওয়ার পাশাপাশি ব্যথার স্থানে কালোজিরার
তেল মালিশ করতে হবে।
☆☆রূপচর্চায় কালোজিরা তেলের ৭টি মহাগুণ
স্বাস্থ্যের পাশাপাশি রূপচর্চায়ও কালোজিরা তেল বেশ উপকারী।
কালোজিরা তেল যতো উপকারিতা
১. ব্রণের সমস্যায়: ব্রণের সমস্যা দিনদিন যেন বেড়েই চলেছে ব্যস্ত জীবনে।কালোজিরার তেলে থাকা এন্টি-মাইক্রোবিয়াল,
এন্টি-ইনফালাম্যাটরি ত্বকের ব্রণের জীবাণুগুলো ধ্বংস করে।
এক গবেষণায় দেখা গেছে,কালোজিরার তেল ৫৮% জীবাণু
ধ্বংস করে প্রথম সপ্তাহে এবং দ্বিতীয় সপ্তাহে ৩৮% জীবাণু হ্রাস পায়।
২. একজিমা দূর করতে: ত্বকের একপ্রকার বিশ্রী সমস্যা হচ্ছে
একজিমা।কালোজিরার তেলের এন্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান ত্বকের অভ্যন্তরীণ থেকে একজিমার সেলগুলোকে
ধ্বংস করে এবং রোগটি সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে।
৩. সোরিয়াসিস: এটিও একপ্রকার ত্বকের সমস্যা। এক্ষেত্রে
ত্বকে চুলকানিসহ দাগ পড়ে যায়।কালোজিরার তেল এই রোগটি নির্মূলে সাহায্য করে।
৪. শ্বেতরোগ দূর করতে: শ্বেত বা ছুলী রোগটা সারাতে কালোজিরার তেল বেশ উপকারী।আগে একটুকরো আপেল ছুলীর স্থানে কিছুক্ষণ ঘষে নিতে হবে।তারপর সেই স্থানটিতে
কালোজিরার তেল লাগাতে হবে।এভাবে একমাসে ছুলী রোগের অনেকটা সমাধান হয়ে যাবে।
৫. ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করতে: কালোজিরার তেলে থাকা
ফ্যাটি এসিড ও অ্যামানো এসিড ত্বকের ভিতরের লিপিড লেয়ারকে ময়েশ্চারাইজ করে।এতে থাকা এন্টি-অক্সিডেন্ট
ত্বকের সেলগুলোকে উজ্জ্বল করে।
৬. ত্বকের বলিরেখা দূর করে:
বর্তমান সময়ে বয়সের আগে
আমাদের ত্বক বুড়িয়ে যায়।কালোজিরার তেলে থাকা এন্টি-
অক্সিডেন্ট ত্বকের বলিরেখা দূর করতে সাহায্য করে।এতে আরোও রয়েছে এন্টি-ফালাম্যাটরি যা ত্বকের স্ট্রেসগুলো দূর করে।
৭. চোখের পাপড়ির ঘনত্ব বাড়াতে:
অনেকেই চান ঘনকালো চোখের পাপড়ি। এখানে কালোজিরার তেল আপনাকে সাহায্য করতে পারে।কয়েকফোঁটা কালোজিরার তেল নিয়ে রাতে ঘুমাতে যাবার আগে চোখের পাপড়িতে ব্যবহার করুন।সকালে মুখ পরিষ্কার করে ফেলুন।তবে
সাবধান থাকতে হবে যেন চোখের ভিতর তেল না যায়।
☆☆কালোজিরার ফর্সা করার ফেসপ্যাক,মসৃণ- উজ্জ্বল ত্বক
প্রথমেই লাগবে কালোজিরার বীজ। এই বীজগুলোকে খুব ভালোভাবে গুড়ো করে নিতে হবে।পরিমাণমতো কালোজিরার গুড়ো একটি বাটিতে নিয়ে তাতে কাচা দুধ মিশাতে হবে।ঘন পেস্ট তৈরী হবে। ত্বকের যেকোন জায়গা বা মুখে ব্যবহার করা যাবে।মুখ ভালোভাবে আগে ধুয়ে নিতে হবে।তারপর ফেসপ্যাকটি লাগাতে হবে।
ভালোভাবে শুকিয়ে
গেলে কাচা দুধ দিয়ে ফেসপ্যাকটি মুখ থেকে তুলতে হবে।এতে ত্বক ম্যাসেজ করাও হবে।তারপর পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে
নিতে হবে।
এবার আগের ত্বকের সঙ্গে এখনের ত্বকের পার্থক্যটা নিজেই বুঝতে পারবেন।ত্বক আগের চেয়ে অনেক
উজ্জ্বল,মসৃণ ওনরম হবে।ত্বকের মৃতকোষগুলো দূর হয়ে যাবে।
ভালো ফলাফল পেতে একদিন পরপর ফেসপ্যাকটি
ব্যবহার করতে হবে।এবার ময়েশ্চারাইজ করার জন্য ত্বক যদি শুষ্ক হয় তবে অলিভ অয়েল বা বাদাম তেল ব্যবহার করতে হবে।আর তৈলাক্ত ত্বক হলে ক্রিমবেজ ময়েশ্চারাইজ
ব্যবহার করতে হবে।
0 Comments