খুব মনোজগ দিয়ে পড়লেই আশা করি আপনার সমাধান পাবেন ইনশাল্লাহ
সূর্যমুখী ফুল নিয়ে কিছু কথা
আপনাদের যে কোনো সমস্যায় পোষ্টা গুলো পড়েন আশাকরি সমাধান পাবেন
সূর্যমুখী একটি একবর্ষীয় ফুলগাছ।সূর্যমুখী গাছ লম্বায় ৩ মিটার বা ৯.৮ ফুট হয়ে থাকে।ফুলের ব্যাস ৩০ সেন্টিমিটার বা
১২ ইঞ্চি পযর্ন্ত হয়।এই ফুল দেখতে কিছুটা সূর্যের মতো।বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই ফুলের বানিজ্যিক চাষ হয়ে থাকে।
সূর্যমুখী তেল
সূর্যমুখী বা সানফাওয়ার ফুল,ভীষণই আকর্ষণীয় এই ফুলগুলো পূর্ণ গরমকাল এবং বর্ষাকাল ধরেই ফোটে।মাটিতে হোক বা ছোট টবে,খুব সহজেই এদের বৃদ্ধি করা যায়।বানিজ্যিকভাবে এই ফুলের চাষ হয় তার তেলের জন্য।রান্নাতে অনেকেই এই তেলের ব্যবহার করেন।সূর্যমুখী ফুল সব ধরণের মাটিতেই চাষ করা যায়।তবে দো-আঁশ মাটি চাষের জন্য বেশি উপযুক্ত।
☆☆কখনো কি ভেবে দেখেছেন সূর্যমুখী ফুল কেন সূর্যের অভিমুখে তাকিয়ে থাকে?
চলুন জেনে নিই।
নাম তার সূর্যমুখী।সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে বলেই এমন নামকরণ। এখন কথা হচ্ছে সূর্যমুখী ফুল কিভাবে জানতে পারে ঠিক কোনদিকে সূর্য আছে।আর কিভাবেই বা সূর্যের দিকে মুখ ঘোরাতে পারে।এই নিয়ে গবেষণা করেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োলজির একজন অধ্যাপক।তার গবেষণার নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে সায়েন্স সাময়িকীতে।তিনি বলছিলেন সূর্যমুখী ফুলের এই প্রবণতা নিয়ে মানুষের কৌতূহল আজকের নয়।১৮৯৮ সালের একটি নিবন্ধ আমি দেখেছি।যাতে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে কিভাবে এই সূর্যমুখী গাছের ফুল ও পাতা দিনের বেলায় সূর্যকে অনুসরণ করে।এই ফুল দিনের বেলা পূর্বদিকে মুখ ঘুরিয়ে থাকে,সন্ধ্যার সময় পশ্চিম দিকে মুখ করে থাকে। আবার রাতের বেলায় পূর্বদিকে মুখ ঘুরিয়ে থাকে।যাতে সে পরেরদিনের সূর্য উঠার আগেই প্রস্তুত থাকে।কেন তারা এটা করে তা নিয়ে বেশকিছু তত্ত্ব আছে।আমার মনে হয় সূর্যের দিকে মুখ করে থাকলে গাছটার পক্ষে অনেকবেশি ফোটন কণিকা শুষে নেওয়া সম্ভব হয়।কারন গাছের জন্য আলো হচ্ছে খাদ্যের মতোই একটা জিনিস।তাছাড়া গাছের মধ্যে একটা বায়োলজিক্যাল ঘড়ির মতো প্রক্রিয়া আছে।যার ফলে সে দিন রাতের পার্থক্য এবং কখন সূর্য উঠবে তা বুঝতে পারে। অন্য তত্ত্ব হলো-গাছের বৃদ্ধি ও শারীরিক কার্যকলাপের জন্য বিভিন্ন ধরণের হরমোন সাহায্য করে।এমনি একটি হরমোন হল অক্সিন। অক্সিন হরমোনের নানা ধরণের কাজের মধ্যে রয়েছে কান্ড ও পাতার বৃদ্ধি। আলোর সাথে উদ্ভিদের যে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া তাই-ই হল ফটোট্রপিক ক্রিয়া।
অক্সিন হরমোনের যে পাশে সূর্যের আলো পড়েনা অর্থাৎ যে পাশে ছায়া থাকে সে পাশে দ্রুত বৃদ্ধি পায়।এটি উদ্ভিদের যে অংশে থাকে সেখানে PH এর মান কমিয়ে দেয়।ফলে এর সেলুলোজ কোষগুলো ফেটে যায়।ফলে অতিরিক্ত চাপের সৃষ্টি হয়। এই চাপই সূর্যমুখী ফুলকে সূর্যের দিকে ঘুরতে বাধ্য করে।পরিপূর্ণ সূর্যমুখী ফুল কিন্তু ঘুরে না,পূর্বদিকে মুখ করে রাখে।তাই দিনের শুরুর দিকে সূর্যমুখীর মুখ থাকে পূর্বদিকে,আর দিনের শেষের দিকে সূর্যমুখীর মুখ থাকে পশ্চিমদিকে।
☆☆সূর্যমুখীর বীজের উপকারিতা
সূর্যমুখীর বীজে রয়েছে ভিটামিন ই,যা এন্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে।শরীরের বিভিন্ন অংশের জ্বালাপোড়া কমায়।নিয়মিত এই বীজ খেলে অস্টিও আর্থারাইটিস, এ্যাজমা,বাতরোগ নিরাময় হয়।হাড়ের সুস্থতার জন্য ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম দুটোই খুব জরুরী।সূর্যমুখীর বীজ খনিজ পদার্থের ভালো উৎস।তাই এটি সুস্থ হাড় গঠনে সহায়তা করে।এর মধ্যকার ম্যাগনেসিয়াম নার্ভসেলের অতিরিক্ত ক্যালসিয়ামের মাত্রা কমিয়ে স্নায়ুতন্ত্রকে সঠিকভাবে কাজ করতে সাহায্য করে।
সূর্যমুখীর বীজ ক্যান্সার ভলো হয়
সূর্যমুখীর বীজ রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। এই বীজে রয়েছে ট্রিপটোফেন নামক এক ধরণের অ্যামিনো এসিড।যা শরীরে সেরোডনের উৎপাদনে সাহায্য করে।সেরোডন হচ্ছে এমন একটি উপাদান, যা ক্লান্তি,দুশ্চিন্তা ও হতাশা দূর করে। এই বীজে রয়েছে উচ্চমানের ফাইটোসিরল।যা কিনা ক্যান্সার প্রতিরোধক।শরীরে ক্যান্সার কোষ তৈরী হতে দেয়না।এই বীজে রয়েছে এন্টিএজিং প্রোপারটিজ।যা কিনা ত্বকে বয়সের ছাপ পড়তে দেয়না।এই বীজে থাকা ভিটামিন ই ওবিটা ক্যারোটিন ত্বককে তারুণ্যদীপ্ত করে এবং উজ্জ্বল্য ধরে রাখে।এর মধ্যকার বিটা ক্যারোটিন ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকারক প্রভাব থেকে মুক্ত রাখে।সূর্যমুখীর বীজে ফ্যাটিএসিড থাকায় তা ত্বকের টানটানভাব ধরে রাখে এবং ত্বককে মসৃণ ও কোমল রাখে।এতে রয়েছে এন্টিব্যাকটেরিয়াল প্রোপারটিজ।যা জীবানুর সংক্রমণ থেকে বাঁচায়। এই বীজে রয়েছে ভিটামিন বি সিক্স।যা মাথার স্কাল্পে অক্সিজেন সরবরাহ করে চুলপড়া রোধ করে এবং স্বাস্থ্য উজ্জ্বল নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।এতে আরো রয়েছে কপার।যা চুলের স্বাভাবিক রং ধরে রাখে।
১. সূর্যমুখীর বীজ ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
২. সূর্যমুখীর বীজ দেহের হাড় সুস্থ রাখে ও মজবুত করে।
৩. এই সূর্যমুখীর বীজ আমাদের মানসিক চাপ দূর করে।
৪. সূর্যমুখীর ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
৫. সূর্যমুখী বীজ আমাদের কে হার্টের সমস্যা থেকে দূরে রাখে।
☆☆সূর্যমুখী তেলের উপকারিতা
সূর্যমুখীর তেল ঘিয়ের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়।যা বনস্পতি তেল নামে পরিচিত।এই তেল অন্যান্য তেল অপেক্ষা ভালো এবং হৃদরোগীদের জন্য বেশ কার্যকর। এতে কোলেস্টেরলের মাত্রা অত্যন্ত কম।তাছাড়া এতে ভিটামিন এ,
ডি ও ই রয়েছে।
১. প্রচুর পরিমাণে খাদ্যশক্তি থাকায় সূর্যমুখী বীজের তেল আমাদের দূর্বলতা কাটাতে কার্যকরী। আমাদের দেহের কার্যক্ষমতা বাড়াতে এবং শরীরকে দীর্ঘদিন কর্মক্ষম রাখতে
সূর্যমুখীর ভূমিকা অনন্য।
হাড় শক্ত করার উপায়
২. সূর্যমূখীর তেল আমাদের দেহের হাড়কে সুস্থ রাখে ও মজবুত করে।আমাদের দেহের ক্যালসিয়াম,ম্যাগনেসিয়াম ও কপারের চাহিদা পূরণ করে সূর্যমুখীর তেল।
ক্যান্সার রোগীর খাবার তালিকা
৩. জটিল ব্যাধি ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে খুবই পারদর্শী সূর্যমুখীর তেলে থাকা সিলিনিয়াম উপাদান। এই উপাদান ক্যান্সারের জীবানুর একমাত্র শত্রু।
মানসিক চাপ কমানোর খাবার
৪. সূর্যমুখীর তেলে থাকা ম্যাগনেসিয়াম উপাদান আমাদের মানসিক চাপ দূর করে।
মাইগ্রেনের সমস্যা ও আমাদের মস্তিষ্ককে শান্ত রাখতে সাহায্য করে এই উপাদান।
ভিটামিন ই তেল
৫. এই তেলে আছে ভিটামিন ই।যা আমাদের দেহের নানারকম ব্যথা দূর করতে সহায়তা করে।এই উপাদান আমাদের ত্বককে সূর্যের আলট্রা ভায়োলেট রশ্মি থেকে রক্ষা করে।ত্বকের অযথা বুড়িয়ে যাওয়া ও ক্ষয়রোধে এই তেল খুবই উপকারী।
হাড়ের ব্যথা কমানোর উপায়
গ্যাস্ট্রিক আলসার থেকে মুক্তির উপায়
হাঁপানি রোগের গাছ
৬. হাড়ের জোড়ায় ব্যথা,গ্যাস্ট্রিকের আলসার,চামড়ায় জ্বালাপোড়া,হাঁপানি ইত্যাদি রোগ সারিয়ে তুলতে সূর্যমুখীর তেল উপকারী।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির উপায়
৭. সূর্যমূখীর তেল আমাদের দেহের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।শরীরের বাড়তি ওজন কমাতে সূর্যমুখীর তেলের তুলনা হয়না।তাই প্রতিদিন খাবার প্রস্তুতের সময় তেলের পাশাপাশি এর বীজ বাদামের মতো করে ভেজেও খেতে পারেন।
☆☆সূর্যমুখীর বীজ খাওয়ার পদ্ধতি
বিভিন্ন স্ন্যাকস তৈরীতে সূর্যমুখীর বীজ ব্যবহার করা হয়।
শুধুমাত্র বাদামের মতো করে ভেজে খোসা ফেলে খেতে পারেন।বাদামের মতো ভেজে খোসা ফেলে বেটে নিয়ে বিভিন্ন তরকারিতে দেওয়া যায়। যা খাবার সুস্বাদু করার পাশাপাশি পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধও করবে।
☆☆সূর্যমুখীর বীজ সংরক্ষণ পদ্ধতি
সূর্যমুখী গাছটি যখন শুকিয়ে যাবে বা ফুলগুলো যখন পরিপূর্ণ হয়ে যাবে,তারপর গাছটি কিন্তু তুলে ফেলবেন না।গাছটিকে কিন্তু ভালো করে শুকিয়ে নিতে হবে।খুব ভালো করে শুকনো করে নিলেই কিন্তু এই ফুলগুলো থেকে বীজ পাওয়া যাবে।গাছটি ও ফুলগুলো ভালোভাবে শুকিয়ে যাবার পর ফুলগুলো কেটে নিতে হবে।যেহেতু ফুলের ভেতরেই বীজ থাকে,তাই ফুল শুকাবার দিনগুলোতে সাবধান থাকতে হবে।নয়তো পাখিরা এসে বীজগুলো খেয়ে ফেলবে।এবার হাতে শুকনো ফুলটা নিয়ে এর মধ্যকার কালো বৃত্তাকার অংশটা ঘষলেই বা নাড়াচাড়া করলেই কালো বীজগুলো বেরিয়ে আসবে।একেকটা ফুলে অসংখ্য বীজ থাকে।বীজগুলো একদম কালোবর্ণের হয়ে যাবে।তারপর দুইদিন রোদে ভালোভাবে শুকিয়ে এয়ারটাইট প্যাকেটে ভরে সংরক্ষণ করা যাবে।
0 Comments