খুব মনোজগ দিয়ে পড়লেই আশা করি আপনার সমাধান পাবেন ইনশাল্লাহ
ঘৃতকুমারী বৈজ্ঞানিক নাম
এ্যালোভেরা যাকে আমরা বাংলায় ঘৃতকুমারী বলে থাকি,এটি একটি চমৎকার ভেষজ।এটি একটি রসালো প্রকৃতির উদ্ভিদ।ঘৃতকুমারী গাছটা অনেকটাই কাটাওয়ালা ফণীমনসা বা ক্যাকটাস গাছের মত। এ্যালোভেরা ক্যাকটাসের মত দেখতে হলেও ক্যাকটাস নয়। লিলি প্রজাতির উদ্ভিদ। এর আদি নিবাস আফ্রিকার মরুভূমি অঞ্চল ও মাদাগাস্কার এলাকায়।
এ্যালোভেরা আজ থেকে প্রায় ৬০০বছর আগে মিশরে উৎপত্তি লাভ করে।ভেষজ চিকিৎসায় এ্যালোভেরার ব্যবহার পাওয়া যায় সেই খ্রিস্টপূর্ব যুগ থেকেই।তখন থেকে বতর্মান সময় পযর্ন্ত এ্যালোভেরার অনেক গুণের কথায় ই আবিষ্কৃত হয়েছে।ঘৃতকুমারী বহুজীবি ভেষজ উদ্ভিদ এবং দেখতে অনেকটাই আনারস গাছের মত।
এর পাতাগুলো পুরু এবং দুইধারে করাতের মত কাটা এবং ভেতরে লালার মতো পিচ্ছিল শাঁস থাকে।সবরকম জমিতেই ঘৃতকুমারীর চাষ করা সম্ভব।তবে দো-আঁশ ও অল্প বালুমিশ্রিত মাটিতেই এই উদ্ভিদের বৃদ্ধি ভালো হয়। দিনদিন কিন্তু এর পরিচিতি বেড়েই চলেছে।বহুগুণে গুণান্বিত এই উদ্ভিদের ভেষজ গুণের কোন শেষ নেই। অনেকের কাছেই এ্যালোভেরা জুস বা শরবত খুব প্রিয়।বাজারে অনেক কসমেটিকসও আছে যেটা এ্যালোভেরাসমৃদ্ধ।
যেমন-এ্যালোভেরা সোপ,ফেসওয়াশ,শ্যাম্পু।তার মানে এ্যালোভেরার মধ্যে এমন কিছু ভেষজ গুণ আছে যার জন্য কসমেটিকসগুলোর মধ্যে এ্যালোভেরার নির্যাস ব্যবহার করা হয়।আসুন জেনে নিই এ্যালোভেরার কিছু বিস্ময়কর উপকারিতা।
অ্যালোভেরার উপকারিতা
☆☆এ্যালোভেরার প্রথম যে গুণটা সেটার কথা বলি।আমরা যা খাচ্ছি মানে ন্যাচারাল খাবার তো তেমন খাচ্ছি ই না,আর্টিফিসিয়াল যে খাবারগুলো খাচ্ছি সার দেওয়া।তার জন্য আমাদের দেহের কোষের মধ্যে টক্সিন জমে যায়। এই টক্সিনকে দূর করার জন্য এ্যালোভেরা খুব সাহায্য করে।
হার্ট ভালো রাখে যেসব খাবার
☆☆হার্ট সুস্থ রাখে।হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখতে এ্যালোভেরার জুড়ি মেলা ভার।এ্যালোভেরার জুস আমাদের হার্টকে সুস্থ রাখতে বিশেষভাবে সহায়তা করে।কোলেস্ট্রেরলের মাত্রা কমিয়ে দেয় এ্যালোভেরা।উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখে।ফলে রক্তে অক্সিজেন পরিবহন করার ক্ষমতা বেড়ে যায়।দূষিত রক্ত দেহ থেকে বের করে রক্তকণিকা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে এ্যালোভেরা।ফলে দীর্ঘদিন হৃদযন্ত্র সুস্থ থাকে।
☆☆মাংসপেশি ও জয়েন্টের ব্যাথা প্রতিরোধ করে।এমনকি ব্যথার জায়গায় এ্যালোভেরা জেল লাগালেও ব্যথা কমে যায়।
দাঁতের ক্ষয় রোধে করণীয়
☆☆এ্যালোভেরা দাঁতের ক্ষয়রোধ করে।এ্যালোভেরার জুস দাঁত এবং মাড়ির ব্যথার উপশম করে।দাঁতে কোন ইনফেকশন থাকলে সেটিও দূর করে।
☆☆ওজন কমাতে এ্যালোভেরার জুস বেশ কার্যকর।ক্রনিক প্রদাহের কারনে শরীরে মেদ জমে।এ্যালোভেরা এই প্রদাহ দূর করে ওজন হ্রাস করে থাকে।পুষ্টিবিদরা এই কারনে ডায়েট লিস্টে এ্যালোভেরার জুস রাখতে পরামর্শ দেন।
হজম শক্তি বাড়াতে অ্যালোভেরার
☆☆হজম শক্তি বৃদ্ধিতে এ্যালোভেরা জুসের কোন জুড়ি নেই।এটি অন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি করে অন্ত্রের প্রদাহ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে।যা হজমশক্তিকে বাড়িয়ে দেয়।
☆☆এ্যালোভেরা ডায়রিয়ার বিরুদ্ধে ও ভালো কাজ করে।
পাকস্থলী সুস্থ রাখার উপায়
☆☆এ্যালোভেরা পাকস্থলীর জন্য ভালো কাজ করে।যদি কারো পেটের সমস্যা থাকে,যদি কারো হাইপার এ্যাসিডিটি থাকে, আলসার থাকে।তাদের জন্য এ্যালোভেরা ভালো কাজ করে।
লিভার ও কিডনি ভালো রাখার উপায়
☆☆লিভারের সমস্যা যদি কারো থাকে,জন্ডিস।তার জন্য এ্যালোভেরা খুব ভালো কাজ করে।
☆☆যাদের ডায়াবেটিস আছে তারা সহায়ক পথ্য হিসেবে এ্যালোভেরা খেতে পারেন।এ্যালোভেরার জুস রক্তে সুগারের পরিমাণ ঠিক রাখে এবং দেহে রক্ত সঞ্চালন বজায় রাখে।ডায়াবেটিস শুরুর দিকে নিয়মিত এই জুস খাওয়া হলে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়।সুতরাং খাওয়ার আগে বা পরে নিয়মিত এ্যালোভেরার জুস পান করুন।তাহলে ডায়াবেটিস মুক্ত থাকবেন।
☆☆ত্বকে এ্যালোভেরার ব্যবহার ব্রণ হবার প্রবণতা কমিয়ে দেয়।
দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে কোনটি
☆☆এ্যালোভেরা হলো এন্টিমাইকোবিয়াল এবং এন্টি ফাঙ্গাল উপাদানসমৃদ্ধ একটি গাছ।এ্যালোভেরার জুস নিয়মিত পান করলে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
ভিটামিন সি সবচেয়ে বেশি কোন ফলে
☆☆এ্যালোভেরাতে রয়েছে ভিটামিন সি।যা মুখের
জীবানু দূর করে মাড়ি ফোলা ও মাড়ি থেকে রক্ত পড়া বন্ধ করে।গবেষণায় দেখা গেছে যে,এ্যালোভেরার জেল মাউথওয়াশের বিকল্প হিসেবেও কার্যকরভাবে ব্যবহার করা যায়।
☆☆মাথার খুশকি দূর করতে এ্যালোভেরার তুলনা নেই।এমনকি ঝলমলে চুলের জন্যও এ্যালোভেরা অনেক উপকারী।সুতরাং চুলের যত্নে এ্যালোভেরাকে আপনি নিত্যসঙ্গী বানিয়ে নিন।
মুখে ঘা এর চিকিৎসা
☆☆মুখের ঘা বা ক্ষত সারায়। অনেকের মুখে ঘা হয় আর ঘায়ের জায়গায় এ্যালোভেরা জেল লাগিয়ে দিলে ঘা তাড়াতাড়ি সেরে যায়।
এ্যালোভেরা ক্যান্সার ঘটায়
☆☆এ্যালোভেরা ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।
☆☆দেহের দূর্বলতা দূর করতে এ্যালোভেরার জুড়ি মেলা ভার। আপনি যদি নিয়মিত এ্যালোভেরার জুস পান করেন তাহলে দেহের ক্লান্তি ও থাকবে না,আর শরীর ও হয়ে উঠবে সতেজ ও সুন্দর।
☆☆এ্যালোভেরার জুস কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
এ্যালোভেরা কিডনিকে ভালো রাখে।আমাদের পুরো শরীরকে ভালো রাখে।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ফল
এ্যালোভেরা হচ্ছে এমন একটি খাবার,যেটাকে আমরা প্রতিদিন গ্রহন করতে পারি।এ্যালোভেরা এন্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে।সেক্সসুয়্যাল বিভিন্ন সমস্যায় কাজ করে।এ্যালোভেরা এন্টিক্যান্সার হিসেবে কাজ করে।
☆☆যাদের এলার্জি আছে,তারা এ্যালোভেরার জুস খেতে পারেন।
☆☆এ্যালোভেরায় আছে ক্যালসিয়াম,সোডিয়াম, আয়রন,পটাসিয়াম,ম্যাঙ্গানিজ,জিংক,ফলিক অ্যাসিড, অ্যামিনো অ্যাসিড ও ভিটামিন এ,ভিটামিন বি সিক্স,বি টু ইত্যাদি।
☆☆ত্বকের সমস্যায় এ্যালোভেরার জেল ব্যবহার করতে পারেন।
তার মানে এ্যালোভেরা যেভাবে আপনি খেতে পারবেন,ঠিক তেমনি বাহ্যিকভাবে ব্যবহারও করতে পারবেন। এ্যালোভেরার
জেল চুলের যত্নে ব্যবহার করতে পারেন।
▪এবার জেনে নিই এর ক্ষতিকারক দিকগুলো▪
এ্যালোভেরা আপকারিতা
এ্যালোভেরা বেশি পরিমাণে খেলে পেটে ব্যথা হতে পারে,পেটের মধ্যে অস্বস্তি হতে পারে।আবার শরীরে পটাশিয়ামের লেবেলটা অনেকটা কমে যায়।পটাশিয়ামের
লেবেল কমে গেলে হার্টবিটের সমস্যা হয় এবং শরীরে ভীষণভাবে ক্লান্ত লাগে। অতিরিক্ত এ্যালোভেরার জুস খেলে সুগার লেবেলও কমে যায় এবং ডিহাইড্রেশনও দেখা দেয়।
গর্ভাবস্থায় অ্যালোভেরার জুস - ব্যবহার, অপকারিতা
গর্ভবতী মহিলাদের কোন অবস্থাতেই এ্যালোভেরা জুস খাওয়া উচিত না।যেসব নারীরা শিশুদের বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন,তাদেরও এই জুস খাওয়া উচিত হবেনা।অনেকেরই ত্বকে এ্যালোভেরা জেল লাগালে অস্বস্তি হয়।তাদের এই জেল একেবারেই লাগানো উচিত না।
এ্যালোভেরা ক্ষতিকর দিকগুলো
☆☆অতিরিক্ত এ্যালোভেরা ব্যবহার করলে এলার্জি গঠিত
রোগ যেমন-চামড়ায় রেশ ও দাদ ইত্যাদি হতে পারে।এছাড়া শ্বাস নিতে অসুবিধা,বুকে ও ঘাড়ে ব্যথা ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
☆☆অপরিশোধিত এ্যালোভেরা দেহে ডিহাইড্রেশন ও মূত্রের রং বাদামি বা লাল করে দিতে পারে।
অ্যালোভেরার মারাত্মক ক্ষতি
☆☆চিকিৎসাধীন অবস্থায় এ্যালোভেরা খেলে মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
☆☆দীর্ঘদিন এ্যালোভেরা খেলে আন্ত্রিক ক্যান্সারের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
☆☆অতিরিক্ত এ্যালোভেরা কিডনির মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে।
▪▪এবার আসুন জেনে নিই রূপচর্চায় এ্যালোভেরার
ব্যবহার▪▪
রূপচর্চায় এলোভেরার উপকারিতা
প্রথমেই বলে নিই,যদি বাজার থেকে এ্যালোভেরাসমৃদ্ধ ক্রিম কিনে লাগানো হয় তাতে তেমন কোন সমস্যা হয়না।কেননা সেটা প্রসেস করা থাকে।কিন্তু যদি সরাসরি গাছ থেকে নিয়ে ই ব্যবহার করা হয় তাহলে সেটা কিন্তু ত্বকের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর।তার কারন হচ্ছে যেই আপনি পাতাটা কাটবেন দেখবেন হলুদ রঙের একটা তরল বের হয়।যেটাকে বলা হয় এলোল্যাটিস।তাই পাতাটাকে গাছ থেকে কেটে দুইঘণ্টা সোজা করে একটা বাটিতে দাঁড় করিয়ে রাখতে হবে।যাতে জেলির মতো হলুদ তরলটা বাটিতে পড়ে যায়। এবার পাতাটা ভালোভাবে ধুয়ে,পাতার দুইপাশের কাটাওয়ালা জায়গা ফেলে দিতে হবে।এবার ভেতর থেকে শাঁসটা বের করে একটা জায়গায় সংরক্ষণ করে রেখে দেওয়া যাবে।ফ্রিজে সংরক্ষণ করলেই বেশি ভালো। এবার বলি এ্যালোভেরা সরাসরি ত্বকে ব্যবহার না করে ত্বকের কোন একটু অংশে লাগিয়ে দেখে নিবেন অস্বস্তি হয় কিনা।হলে ব্যবহার না করাই ভালো। যাদের হয়না তারা হাতে জেল নিয়ে মুখে লাগিয়ে কিছুক্ষণ রেখে ধুয়ে ফেলুন।নিয়মিত ব্যবহারে ত্বক এমনিই উজ্জ্বল হয়ে যাবে।অনেকে আবার রাতে জেলের সঙ্গে ভিটামিন ই ক্যাপসুল মিশিয়ে ও ব্যবহার করেন।যাদের ত্বক অয়েলি তারা জেল ব্যবহার করবেননা।তারা মূলতানি মাটির সঙ্গে এ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে ব্যবহার করবেন।যাদের ত্বক শুষ্ক
তাদের ক্ষেত্রে এ্যালোভেরা জেল খুব ভালো কাজ করে।
যাদের সেন্সিটিভ স্কিন তারা শসার রসের সঙ্গে জেল মিশিয়ে ব্যবহার করবেন।
অনেকে পাতিলেবেুর রসের সঙ্গে জেল মিশিয়ে ব্যবহার করেন। এতে করে মুখের অয়েলটা অনেকটা কমে যাবার পাশাপাশি ত্বকের লোমকূপগুলিও খুলে যায়।
অনেকে হলুদ,কাচা দুধের সঙ্গে মিশিয়ে এ্যালোভেরা ব্যবহার করে।কারো যদি খুব ব্রণের সমস্যা হয়,তাহলে সে নিম জলের সঙ্গে এ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে ব্যবহার করলে উপকার পাবে।কেউ যদি স্কাবার হিসেবে ব্যবহার করতে চাই তাহলে জেলের সঙ্গে ওটমিল বা ওটস মিশিয়ে আলতোভাবে ত্বকে ম্যাসাজ করতে হবে। তারপর দশ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেললেই হলো।
0 Comments