ব্রাউন সুগার না টেবিল সুগার।সাদা না বাদামি চিনি কোনটা
শরীরের জন্য উপকারী।
আমরা অনেকেই ক্যাফে বা রেস্তোরাঁয় গেলে সাদা চিনি এড়িয়ে চলি।চিনির দরকার হলে
ব্রাউন সুগার চেয়ে নিই।অনেকেই আবার চিনি কিনলে সাদা
চিনির পরিবর্তে ব্রাউন সুগার কিনছি।
আর সাথে ভাবছি স্বাস্থ্যের অপকার কম হবে।আমরা আমাদের পরিবারকে স্বাস্থ্যকর চিনি খাওয়াচ্ছি।কিন্তু বিষয়টা একেবারেই তা নয়।
কারন বিশেষজ্ঞদের মতে,সাদা চিনি বা বাদামি চিনি দুটোতেই
কিন্তু ক্যালরির পরিমাণ সমান।তবুও দুটো চিনির মধ্যে কিছুতো পার্থক্য আছে।সেগুলো জেনে রাখা দরকার।আর সেই অনুযায়ী আমরা বেছে নিতে পারি কোন চিনিটা আমাদের শরীরের জন্য ভালো হবে।
প্রথমেই বলি বাদামি চিনি বা ব্রাউন সুগার হলো কাচা বা raw
sugar.সেখানে সাদা চিনি বা টেবিল সুগার হলো রিফাইন সুগার।চিনি কিভাবে তৈরী হয় সকলেরই জানা।তবুও বলি।
আখের রস বের করে,তাকে ফুটিয়ে চিনি তৈরী করা হয়।
প্রাথমিকভাবে যে চিনি তৈরী হয় তার রং হয় বাদামি বা লালচে।সেটাই ব্রাউন সুগার নামে বিক্রি হয়।ব্রাউন সুগারের মধ্যে মোলাসেস থাকে।এই চিনিকে আরো রিফাইন করলে তা ক্রিস্টাল তৈরী করে।আর সেটা সাদা চিনি বা টেবিল সুগার।
এক্ষেত্রে দুই চিনির মধ্যে পার্থক্য হলো মোলাসেস।পর্যাপ্ত পরিমাণে মোলাসেস শরীরের জন্য ভালো।এর মধ্যে থাকা এন্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের উপকার করে।সামান্য কিছু পুষ্টিগুণও থাকে।কিন্তু বাদামি চিনির তুলনায় সাদা চিনিতে
মোলাসেসের পরিমাণ অত্যন্ত কম থাকে।ফলে ব্রাউন সুগারকে মোলাসেসের কারনে বেছে নেওয়ায় যায়।
এবার জানি রঙের পার্থক্য।বাদামি চিনি বা ব্রাউন সুগার অনেক কম
রিফাইন করা।ফলে এই চিনির মধ্যে থাকা ক্রিস্টালের মাপ অনেক বড় সাদা চিনির ক্রিস্টালের তুলনায়।সেই কারনে এই চিনির চেহারা অনেক বেশি অর্গানিক এবং রঙটাও বাদামি।
এই কারনেই বাদামি চিনিকে দেখলে অনেক বেশি ন্যাচারাল
মনে হয়।এই চিনি রান্নায় ব্যবহার করলে সেই খাবারের রংও
অনেকটা বাদামি হয়ে যায়।তাই কোন রান্নার রং যদি লালচে
করতে হয় তাহলে তাতে ব্রাউন সুগার ব্যবহার করা হয়।
বাদামি চিনিতে মোলাসেসের কারনে কিছু খনিজ পদার্থ বা মিনারেলসও থাকে।মোলাসেসের মধ্যে থাকা ক্যালসিয়াম,
পটাসিয়াম,আয়রন এবং ম্যাগনেসিয়াম ব্রাউন সুগারের মধ্যে
থেকে যায়।কিন্তু যখনই সে চিনিকে রিফাইন করা হয়,তখনই
মোলাসেস বেরিয়ে যায় চিনি থেকে।তাই সাদা চিনির মধ্যে কোন খনিজ বস্তু বা মিনারেলস থাকে না।কিন্তু এর ফলে আমাদের শরীরের মিনারেলসের চাহিদা যে পূরণ করতে পারবে ব্রাউন সুগার তা নয়।
তার কারন ব্রাউন সুগারের
মোলাসেসের মধ্যে থাকা খনিজ বা মিনারেলসের পরিমাণ অত্যন্ত কম।এক চামচ ব্রাউন সুগারে যে পরিমাণ মোলাসেস থাকে তাতে মাত্র ০.০২ মিলিগ্রাম আয়রন রয়েছে।যেখানে একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের দৈনিক ৮ মিলিগ্রাম আয়রনের দরকার হয়।আর একজন প্রাপ্তবয়স্ক নারীর দৈনিক আয়রনের প্রয়োজন হয় ১৮ মিলিগ্রাম।তাই চিনি থেকে শরীরের মিনারেলসের চাহিদা পূরণ হবেনা।
কিন্তু সাদা চিনির থেকে ব্রাউন সুগার সামান্য হলেও মিনারেলসের উপস্থিতির
বিচারে এগিয়ে থাকে।স্বাদের পার্থক্যের ব্যাপারে যদি বলতে হয় তাহলে বলি যারা দুই ধরণের চিনিই নিয়মিত খেয়ে থাকেন,তারা জানে দুটি চিনির স্বাদ আলাদা।
এর কারন হলো
ব্রাউন সুগারে থাকা মোলাসিস।ঠিক এই কারনেই কিছু কিছু
ক্ষেত্রে সাদা চিনির বদলে বাদামি চিনি ব্যবহার করা হয়।
যেমন-কফির ক্ষেত্রে অনেকেই ব্রাউন সুগার ব্যবহার করে থাকে।ঠিক তেমনি চায়ের ক্ষেত্রে উল্টোটা বেশি চোখে পড়ে।
মানে চায়ে বেশি ব্যবহার করা হয় সাদা চিনি।
☆☆চিনির বিকল্প কি খাবেন
চিনি হচ্ছে এমন একটি খাবার,যার ক্যালরি ছাড়া কোন পুষ্টি
উপাদান নেই।এটি শরীরের স্বাভাবিক হরমোনকে বাধাগ্রস্ত করে এবং বিপাকক্রিয়া নষ্ট করে।
অতিরিক্ত মাত্রায় চিনি খাবার কারনে একজন ব্যক্তির স্থুলকায় হবার সম্ভাবনা থাকে।এছাড়া ডায়াবেটিস হবার ঝুঁকি
থাকে।শিশুদের দাঁতের ক্ষয় হবার ঝুঁকি থাকে।হৃদরোগ ও ক্যান্সার হবার আশঙ্কা থাকে।
একটি গবেষণায় এসেছে,১২আউন্স পরিমাণের একটি সফট ডিঙ্কসের মধ্যে ৯চামচ পরিমাণ চিনি থাকে এবং একটি আইসক্রিমে ৫ চামচ পরিমাণ চিনি থাকে।চিনির বিকল্প প্রাকৃতিক নাকি কৃত্রিম কোনটা ভালো।চিনির বিকল্প হিসেবে স্বাস্থ্যসচেতন অনেকেই
কৃত্রিম সুইটনার ব্যবহার করে থাকেন।
গবেষনায় প্রাপ্ত তথ্যমতে,এই কৃত্রিম বিকল্পগুলোর জন্য কিডনি ও লিভারে
ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে।
এবার জেনে নিই চিনির প্রাকৃতিক বিকল্পগুলো কী?
১. আখের গুড় বা খেজুরের গুড় খেতে পারেন চিনির বিকল্প হিসেবে।এতে ভিটামিন বি6,আয়রন,ক্যালসিয়াম এবং পটাশিয়ামের পরিমাণ বেশি থাকে।যা চিনির তুলনায় আপনার শরীরের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত।
২. নারিকেলের দুধ যদি ফুটিয়ে আপনি শুকিয়ে নেন,দেখবেন নিচে নারিকেলের চিনি জমে থাকে।এটি খুব ভালো এন্টিঅক্সিডেন্টের কাজ করে।এছাড়া এতে ক্যালসিয়াম,জিংক,আয়রন,পটাশিয়াম ইত্যাদি উপাদান থাকে।যা শরীরের জন্য খুবই উপকারী।
৩. দুপুরে ও রাতে খাওয়ার পর যদি কারো মিষ্টি খাওয়ার অভ্যাস থাকে,তবে মিষ্টির পরিবর্তে খেজুর খেতে পারেন।এছাড়া কিসমিস বা শুকনো ফল খেতে পারেন।টাটকা বিভিন্ন
ফলও খেতে পারেন।
৪. সাধারণ চিনির পরিবর্তে যদি আপনি খেজুরের চিনি সংগ্রহ করতে পারেন,তবে এটি দিয়ে আপনি পুডিং বা কেক এইসব তৈরী করতে পারেন।
৫. পুডিং বা কাস্টাডে চিনির বদলে মিষ্টি যে ফলগুলো আছে,সেগুলো বেশি পরিমাণে ব্যবহার করতে পারেন।
৬. খেজুর বা তালের রস জ্বাল দিয়ে এটাকে সিরাপে রূপান্তর করে সংরক্ষণ করে রেখে দিতে পারেন।এটাকে আপনি খাবার মিষ্টি করতে চিনির পরিবর্তে ব্যবহার করতে পারেন।
৭. আপনি গ্রিন টি তৈরী করতে চিনির পরিবর্তে মধু ব্যবহার
করুন।এটি চিনির চেয়ে অনেক উপকারী।এতে এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকে,যা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
যাদের চা পানের অভ্যাস রয়েছে,তারা চিনির পরিমাণ কমিয়ে
কমিয়ে ধীরে ধীরে চিনি খাওয়া ছেড়ে দিতে পারেন।
তাহলে বোঝা যাচ্ছে,চিনির বিকল্প হিসেবে আমরা খেজুর,গুড়,মধু,তালমিছরি,স্টেভিয়া ইত্যাদি ব্যবহার করতে
পারি অনায়াসেই।
☆☆চিনির চেয়ে ৩০০গুণ বেশি মিষ্টি
চিনির চেয়ে বেশি মিষ্টি,কিন্তু ক্যালরিমুক্ত।ভেষজ ঔষধ হিসেবে ডায়াবেটিস রোগী ও সুস্থ মানুষ নির্ভয়ে খেতে পারবে।
এই বিস্ময়কর ভেষজ উদ্ভিদটি হলো স্টেভিয়া।মিষ্টিপাতা, মধুপাতা প্রভৃতি নামে পরিচিত এই উদ্ভিদ।স্টেভিয়ার পাতা চিনি অপেক্ষা ৩০-৪০গুণ আর পাতার স্টেভিয়ার সাইড চিনি
অপেক্ষা ৩০০গুণ বেশি মিষ্টি।ক্যালরিমুক্ত হওয়ায় স্টেভিয়ার
পাতা ডায়াবেটিস রোগীরা খেলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রার পরিবর্তন হয় না।
0 Comments