আঙুরের বৃওান্ত আঙুর খাওয়ার উপকারিতা উপকারিতা।কলো না সুবজ নাকি লাল আঙ্গুর খাবেন
আঙ্গুর ফলকে অন্য ফলের তুলনায় একটু অভিজাত হিসেবেই গণ্য করা হয়। আবার সবসময় দেখা যায় সব ফলের চেয়ে আঙ্গুর ফলের দামও বেশি থাকে।সুস্বাদু এই ফলের রস দিয়ে তৈরী হয় ওয়াইন,জ্যাম,জেলী ইত্যাদি।বাইরের দেশে বিভিন্ন মুখরোচক খাবার রান্নায় এই ফল ব্যবহার করা হয়।আর একটা কথাতো আমরা সবাই জানি,আঙ্গুর শুকিয়ে হয় কিসমিস। এই কিসমিস ছাড়া আমাদের শখের খাবারগুলো হয় একদমই বেমানান।আঙ্গুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন।এর মধ্যে ভিটামিন সি,কে, বি -সিক্স অন্যতম। এছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণে পটাশিয়াম ও খনিজ পদার্থ ম্যাঙ্গানিজ রয়েছে আঙ্গুরে।আঙ্গুর শুকিয়ে যে কিসমিস তৈরী করা হয় তাতে রয়েছে সত্তর শতাংশ ফ্রুক্টোজ।
আজ থেকে প্রায় ছয় থেকে চার হাজার বছর পূর্বে পৃথিবীর পূর্বাঞ্চলের দিকে আঙ্গুরের চাষ প্রথম শুরু হয়।চার হাজার বছর আগে জর্জিয়ায় ওয়াইন তৈরির প্রমাণ খুব ভালোভাবে পাওয়া গেছে।এর মানে হলো আঙ্গুর অনেক পুরনো একটি ফল এবং আঙ্গুরের তৈরী খাবারের ইতিহাস অনেককালের পুরনো।তথ্যানুসন্ধানে জানা যায় যে,তেরশ শতাব্দীতে পার্সিয়ানরা ভারতীয় উপমহাদেশে সর্বপ্রথম আঙ্গুর চাষ প্রবর্তন শুরু করেন। যা পরবর্তীতে ভারতের দক্ষিণাঞ্চলে বিস্তার লাভ করে।ভারতের দক্ষিণাঞ্চলের উষ্ণ আবহাওয়ায় আঙ্গুরের চাষ হলেও বাংলাদেশ এখনো আঙ্গুর চাষে সফল হতে পারেনি।আঙ্গুর সাধারণত বিভিন্ন প্রকারের মাটি ও আবহাওয়ায় জন্মাতে পারে।পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সবুজ,লাল,সাদা,কালচে,খয়েরী এমন বিভিন্ন রঙের আঙ্গুর হতে দেখা যায় ।
উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করার ফলে আজকাল বিচি ছাড়া আঙ্গুর জন্মানো হয়ে থাকে।সারা পৃথিবীর প্রায় ৭৫.৮৬৬ বর্গকিলোমিটার জায়গা জুড়ে আঙ্গুর চাষ হয়ে থাকে।তবে মোট উৎপাদনের শতকরা ৭১ভাগ ওয়াইন তৈরীতে,২৭ভাগ তাজা ফল হিসেবে এবং মাত্র ২ভাগ শুকনো ফল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া কোথাও কোথাও এর পাতাও খাওয়া হয়। এবার জানুন আঙ্গুরের চমকপ্রদ স্বাস্থ্য উপকারিতা।
১|আমরা আঙ্গুরের জুস খেয়ে থাকি।এই জুসে এমন দুইটি উপাদান রয়েছে যা আমাদের অঙ্গ-প্রতঙ্গের প্রদাহ দূর করে।সাধারণত এসব প্রদাহ আমাদের শরীরে ক্যান্সার রোগ সৃষ্টি হবার প্রধান কারন।
২| ত্বককে সুরক্ষিত রাখে।আঙ্গুরের মধ্যে থাকা ফাইটো ক্যামিকেল ও ফাইটো নিউট্রেনড আমাদের ত্বকের সুরক্ষায় বিশেষ কাজ করে।এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি।যা আমাদের ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে সাহায্য করে।
৩|আমাদের ত্বকের ফ্রি রেডিকেলস ত্বকে বলিরেখা ফেলে দেয়।ফলে ত্বকে বয়সের ছাপ স্পষ্ট হয়ে উঠে।আঙ্গুরের মধ্যে থাকা ভিটামিন সি ও এন্টিএক্সিডেন্ট এই ফ্রি রেডিকেলসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে আমাদের ত্বক ঠিক রাখে এবং শরীরে বয়সের ছাপ পড়া প্রতিরোধ করে।
৪|আঙ্গুরের সব ভিটামিন উপাদানগুলো ক্ষতিকারক ইউরিক এসিডের মাত্রা সহনশীল অবস্থায় রাখে এবং সেইসঙ্গে কিডনির রোগব্যাধির বিরুদ্ধে কাজ করে আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখে।
৫|আঙ্গুর মাইগ্রেনের সমস্যা রোধ করে।
৬|সাধারণত যারা রক্তসঞ্চালনের ভারসাম্যহীণতায় ভোগেন বিশেষ করে তাদের জন্য আঙুরের জুস খুব উপকারী।আঙুরের মধ্যে থাকা ফাইটো নিউট্রিয়েন্স যা আমাদের শরীরে নিয়মিত রক্তসঞ্চালনে সহায়ক ও ইনসুলিন বৃদ্ধি করে থাকে।
৭| অনেক সময় আমরা ছোট ছোট কথা খুব দ্রুত ভুলে যায়। আবার অনেক সময় কোন ঘটনা স্মৃতি থেকে বেমালুম মুছে যায়। এটা সত্যিকার অর্থে একধরণের রোগ।এই ভুলে যাওয়া রোগটি নিরাময়ে আঙুর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
৮|স্তন ক্যান্সার নির্মূলে আঙুর খুবই কার্যকর।যেসব নারীরা স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকিতে আছেন তারা নিয়মিত আঙুর খেতে পারেন।কেননা গবেষণায় দেখা গেছে আঙুরের মধ্যে থাকা উপাদানগুলো স্তন ক্যান্সার সৃষ্টিকারী কোষগুলোর বিরুদ্ধে কাজ করতে পুরোপুরি সক্ষম।
৯|চুলের একটু অযত্নেই আমাদের চুলগুলো খুশকিতে ভরে যায় এমন অনেকেই আছেন। আবার চুলের আগা ফেটে গিয়ে চুল রুক্ষ হয়ে পড়ে,ধূসর রঙের হয়ে যায়।শেষমেষ চুল ঝরতে থাকে। এসব সমস্যার সমাধানে আঙুর খাওয়া উপকারী।
১০|আঙুর আমাদের শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
১১|শরীরের হাড় শক্ত করে।আঙুরে আছে বিভিন্ন খনিজ উপাদান যা আমাদের শরীরের হাড়ের গঠন ও হাড় শক্ত করতে সাহায্য করে।
১২|হঠাৎ মাথাব্যাথা শুরু হয়ে গেলে আপনি ঔষধ না খেয়ে আঙুর খান।দেখবেন কিছুক্ষণের মধ্যে আরামবোধ করবেন।
১৩|আমাদের চোখ ভালো রাখতে আঙুর অনেকবেশি কার্যকর।বয়সজনিত কারনে যারা চোখের সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য অনেকবেশি উপকারী এই ফল।
১৪|আঙুরের ঔষধি গুণাগুণ অনেক। আঙুরের এই ঔষধিগুণের কারণে তা আমাদের শরীরকে এ্যাজমার ঝুঁকি থেকে রক্ষা করে এবং ফুসফুসে আর্দ্রতার পরিমাণ বাড়ায়।১৫|যদি নিয়মিত আঙুর খাওয়া হয় তাহলে বদহজম অনেকাংশেই দূর হয়।
১৬|অগ্নিমন্দা দূর করতেও আঙুর অনেকবেশি কার্যকর।তাই বুঝাই যাচ্ছে আমাদের শরীর কে সুস্থ রাখতে আঙুরের জুড়ি মেলা ভার।
অনেকেই হয়তো বাজারে গেলে ভাবেন কোন আঙুর কিনবো।সবুজ,কালো নাকি লাল আঙুর।তাদের জানা প্রয়োজন সব রঙের আঙুরেই একই উপাদান আছে।পুষ্টিমানও একই।হয়তো বড়জোর উপাদানগুলো উনিশ বিশ হতে পারে।তাই নির্ভাবনায় যেকোন রঙের আঙুর কিনুন।তবে বাজার থেকে আঙুর এনে ভালোভাবে ধুয়ে খাওয়া উচিত।কারন এতে কীটনাশক দেয়া থাকে। এছাড়া আঙুরের বাইরে একটা পাউডারের মতো কোটিন থাকে।তাই বাড়িতে আঙুর আনার পর অন্তত ত্রিশ মিনিট পানিতে ভিজিয়ে রেখে তারপর ধুয়ে খাওয়া উচিত। আঙুর রস করে খাওয়ার চেয়ে গোটা আঙুর চিবিয়ে খাওয়ায়ই শরীরের জন্য বেশি উপকারী।কারন এতে যে আঁশ থাকে তা কোষ্ঠ্যকাঠিণ্যের জন্য ভালো। এছাড়া কিডনিতে যাদের পাথর হয়েছে এবং আমাশয়ের রোগীদের জন্য আঙুর উপকারী।আঙুর যেহেতু মিষ্টি ফল তাই ডায়াবেটিস রোগীদের ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া খাওয়া উচিত নয়।বিষন্নতা দূর করতে এবং দাঁতের ব্যাথা কমাতে আঙুর সাহায্য করে।আঙুরে যেহেতু আয়রণ আছে তাই যাদের রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কম আছে তারা যদি নিয়মিত আঙুর খায় তাদের রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বেড়ে যাবে।
0 Comments