আপেল খাবার ১০ টি উপকারিতা ও আপেল খেলে যাদের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে এবং আপেল খাওয়ার উপযুক্ত সময় ▪▪
খিদে পেলেইতো হাতে তুলে নিই বার্গার অথবা পিৎজা।পেট ভরলেই আমরা মনে করি আমাদের শরীর ও বুঝি ভরলো।
যদিও এটা খুবই ভুল ধারণা।আসলে এই ধরণেরখাবারগুলো
আমাদের শরীরকে আরো খারাপের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।তাই শরীরে বাসা বাঁধছে হাজারো সমস্যা।২০০৪ সালে আমেরিকায় ১০০ এর ও বেশি খাবারের উপরে গবেষণা করা হয়।মূলত খাবারগুলোর মধ্যে কতটা পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে, তা জানতেই এই গবেষণা করা হয়েছিল।
Md Rasel khan Apel khayar opukarita |
আপেল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা,
এর মধ্যে লাল এবং সবুজ আপেল যথাক্রমে ১২ এবং ১৩ নম্বরতম স্থানে আছে।তো দেখে নেওয়া যাক আপেলের কোন কোন গুণ কিভাবে আমাদের সুস্থ থাকতে সাহায্য করে।
☆সাদা ঝকঝকে দাঁত☆
আপেল খেলে দাঁতের দারুণ উপকার হয়।তার কারন আপেলে কামড় দিয়ে যখন আমরা চিবুতে শুরু করি তখন আমাদের মুখের ভিতর লালা সৃষ্টি হয়।এই পদ্ধতিতে দাঁতের কোণা থেকে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া বেরিয়ে আসে।এর ফলে সেই ব্যাকটেরিয়া দাঁতের আর কোন ক্ষতি করতে পারেনা।তাই বলে শুধু আপেল খেয়েই দাঁতের যত্ন নিবেন তা কিন্তু নয়।মনে করে সময়মত ব্রাশ আর পেস্টের ব্যবহার করে দাঁতের যত্ন নিতে ভুলবেন না।
গর্ভাবস্থায় আপেল খাওয়ার উপকারিতা
☆ক্যান্সার দূর করে☆
আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন ফর ক্যান্সার রিসার্চের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আপেল খেলে অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সারের সম্ভাবনা প্রায় ২৩ শতাংশ হারে কমে।কারন আপেলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ফ্ল্যাভোনল থাকে। এছাড়াও কর্ণেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা আপেলের মধ্যে এমন কিছু উপাদানের সন্ধান পেয়েছেন যা ট্রিটারপেনয়েডস নামে পরিচিত।এই উপাদানটি লিভার, স্তন এবং কোলনের মধ্যে ক্যান্সারের কোষ বেড়ে উঠতে বাঁধা দেয়।ন্যাশনাল ক্যান্সার ইনস্টিটিউট ইন দ্যা ইউ. এস - এর গবেষণা থেকে জানা যায় যে,আপেলের মধ্যে যে পরিমাণ ফাইবার থাকে, তা মলাশয়ের ক্যান্সার রোধে সাহায্য করে।
☆ডায়াবেটিস এর সমস্যা কমায়☆
যেসকল মেয়েরা নিয়মিত আপেল খান তাদের ডায়াবেটিস হবার সম্ভাবনা ২৮ শতাংশ কমে যায়।তার কারন, আপেলের মধ্যে যে ফাইবার থাকে তা রক্তে শর্করার পরিমাণ সঠিক রাখতে সাহায্য করে।
☆কোলেস্টেরল কমায়☆
আপেলের মধ্যে যে ফাইবার থাকে, তা অন্ত্রের ফ্যাট কমাতে সাহায্য করে।যার ফলে কোলেস্টেরলের মাত্রা সঠিক থাকে।
আপেল কি ভিটামিন আছে,
আর একবার শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমতে শুরু করলে হার্টের কোন ক্ষতি হবার আশঙ্কা ও কমে।
☆হার্ট ভালো রাখে☆
আগেই বলা হয়েছে যে, আপেলের মধ্যে যে ফাইবার থাকে তা কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে।এছাড়াও আপেলের খোসার মধ্যে যে ফেনলিক উপাদান থাকে তা রক্তনালিকার থেকে কোলেস্টেরল দূর করতে সাহায্য করে।এর ফলে হার্টে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকতে পারে।ফলে হৃদযন্ত্রের ক্ষতি হবার আশঙ্কা ও কমে।
☆গলস্টোন সারাতে সাহায্য করে☆
পিত্তথলির মধ্যে অতিরিক্ত পরিমাণ কোলেস্টেরল জমে গেলে তখন গলস্টোন হয়।গলস্টোন কমাবার জন্য ডাক্তাররা সবসময় ফাইবারসমৃদ্ধ ফল বা খাদ্য খাওয়ার উপদেশ দেন।
সেই সঙ্গে গলস্টোন সারাতে ওজন এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানোর পরামর্শ দেওয়া হয়।প্রসঙ্গত এই সবকটি কাজ যাতে ঠিকমতো হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে আপেলের কোন বিকল্প হয়না বললেই চলে।
ডায়রিয়া হলে কি খাওয়া উচিত,
☆ডায়রিয়া এবং কোষ্ঠকাঠিণ্য দূর করে ☆
আপনি কি সারাদিনে বার বার বাথরুমে যেতে থাকেন?
কোন কিছু খেলেই বাথরুমে দৌড়াতে হয়? আবার এমনও কি হয়, যখন বাথরুমে গেলেন তখন দীর্ঘক্ষণ বাথরুমে বসে থাকতে হয়? অথচ কিছুতেই পেট পরিষ্কার হতে চায়না।
তাহলে এই দুই সমস্যারই একটাই ঔষধ।তা হল আপেল।যা প্রয়োজন অনুযায়ী বর্জ্য থেকে অতিরিক্ত পানি টেনে ধরে রাখতে পারে।ফলে একদিকে যেমন বার বার বাথরুমে যেতে হয়না, তেমনি হজম শক্তি বৃদ্ধি করে।সেই সঙ্গে কোষ্ঠকাঠিণ্যের সমস্যা ও দূর করে।
কোন কোন ফল খেলে ওজন কমে,
☆ওজন কমাতে সাহায্য করে☆
কত মানুষ ইতো আছেন, যারা অতিরিক্ত ওজনের কারনে জর্জরিত। আবার শুধুমাত্র এই কারনে নানারকম রোগও শরীরে বাসা বাঁধতে শুরু করে।এমনকি ডায়াবেটিস , হাড়ের রোগ কত কিছু ই না হয়।তাই সেসমস্ত রোগকে যদি বিদায় জানাতে চান, তাহলে নিয়ম করে আপেল খেতে হবে।আপেলে উপস্থিত ফাইবার আপনার পেট ভরতে সাহায্য করে কোনও ক্যালরি ছাড়াই।এর ফলে ওজন ও নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
লিভার ও কিডনি ভালো রাখার উপায়,
☆লিভার সুস্থ থাকে ☆
আমরা যা কিছু খাই, তার মধ্যে কিছু না কিছু ক্ষতিকারক পদার্থ থাকে।ফলে আমাদের লিভারের ক্ষতি হতে শুরু করে।যে কারনে লিভারকে সুস্থ রাখাটা খুব ই চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।তবে লিভারকে ১০০ ভাগ সুস্থ রাখতে পারে আপেল।এটি খুব সহজেই লিভারে জমা হওয়া ক্ষতিকারক উপাদানদের বেরিয়ে যেতে সাহায্য করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে কোন ভিটামিন,
☆রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ☆
আপেলের মধ্যে একধরনের অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকে, যা আমাদের শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে এবং আমাদের শরীরকে ভালো রাখতে সাহায্য করে।
আপেল একটি স্বাস্থ্যকর ফল। আপেলের উপকারিতা অনেক।আর তাই অসুস্থ রোগীদেরকে চিকিৎসকরা আপেল খাবার পরামর্শ দেন।তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ও অনেকেই প্রতিদিন আপেল খান। অনেক উপকারী এই ফলটির কিন্তু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও রয়েছে।যার কারনে মৃত্যু ও হতে পারে।তাই আপেলের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলোও আমাদের জেনে রাখা প্রয়োজন।
আমেরিকান এসোসিয়েশন ফর ক্যান্সার রিসার্চের গবেষকদের মতে, পরিবারের কারো এলার্জির সমস্যা থাকলে আপেল থেকে দূরে থাকাই ভালো।কারন আপেলের গায়ে লেগে থাকা মোম এলার্জির সমস্যা আরো বাড়িয়ে দিতে পারে।আপেলের গায়ে লেগে থাকা মোমে যে সালফার -ডাই-অক্সাইড থাকে,তার প্রভাবে গলা খুশখুশ করা, বমিবমি ভাবসহ একাধিক শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।পরবর্তীতে সেগুলো আরো বাড়তে পারে।কৃত্রিম উপায়ে আপেলের ফলন বাড়াতে এবং কীটপতঙ্গের হাত থেকে বাঁচাতে আপেলে যে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার করা হয়, একাধিক সমীক্ষায় তার প্রমাণ মিলেছে।
আমাদের শরীরে এই কীটনাশকের প্রতিক্রিয়া মারাত্মক ক্ষতিকর।অনেক সময় পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়েও আপেলকে কীটনাশকমুক্ত করা যায় না।ফলে স্বাস্থ্যহানির ঝুঁকি কিন্তু থেকেই যায়। আপেলের বীজ আমাদের স্বাস্থ্যের পক্ষে মারাত্মক ক্ষতিকর।আপেলের বীজ কোন কারনে পেটে চলে গেলে তা স্বাস্থ্যহানির পাশাপাশি মৃত্যুর ঝুঁকি ও অনেকাংশে বাড়িয়ে দেয়। একটা বা দুইটা বীজ পেটে গেলে সমস্যা না হলেও বমিভাব, মাথাব্যথা, পেটে খিচুনী, অস্বাভাবিক ক্লান্তিসহ একাধিক শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
তবে বেশ কয়েকটি আপেলের বীজ চিবিয়ে খেয়ে ফেললে শরীরে তা থেকে মারাত্মক বিষক্রিয়া হতে পারে।আপেলের বীজে একধরণের উপাদান থাকে, যা অত্যাধিক পরিমাণে শরীরে মিশলে রক্তে অক্সিজেনের স্বাভাবিক সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয়।ফলে মিনিট খানেকের মধ্যেই মৃত্যু হতে পারে।তাই আপেল খাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক হন। আপেল অবশ্যই খাবেন, তবে সাবধানতার সঙ্গে খাবেন।
সময়বুঝে আপেল খেলে অধিক পুষ্টি মেলে।আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে এমনটাই বলা আছে।এর পেছনে অবশ্য যথার্থ কারনও আছে।চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক সেই কারনগুলো।
আপেল খাওয়ার উপযুক্ত সময় কখন? প্রতিদিন একটি আপেল খেলে ডাক্তার থেকে দূরে থাকা যায় , এমন একটি প্রবাদ প্রচলিত আছে।তবে মনে রাখতে হবে, এই ফল যখন তখন খেলেই কাজে দিবে না। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রমতে, প্রতিটা ফল খাওয়ার একটা নির্দিষ্ট সময় আছে। এতে ফলটি তার কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে শরীরে।সেই কারনে আপেল খাওয়ার একটি নির্দিষ্ট সময় আছে।সেই সুনির্দিষ্ট সময়টি হলো সকালবেলা। কারন আপেলের খোসা আঁশ ও পেকটিনসমৃদ্ধ। অনেকেরই দেরিতে ঘুম, অপর্যাপ্ত ঘুম ইত্যাদি কারনে হজমজনিত সমস্যা দেখা দেয়।তাই ঘুম থেকে উঠে সকালবেলা আপেল খাওয়া সবচেয়ে ভালো।
অন্যান্য ফলের তুলনায় সকালবেলায় আপেল খেলে ভালো, কারন তা অন্ত্রের ক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য
করে।আপেলে থাকা পেকটিন ল্যাকটিক এসিড সুরক্ষিত রাখতে এবং কোলনে উপস্থিত ব্যাকটেরিয়ার ভালোভাবে বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।যা পরবর্তীতে পাচনতন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।এছাড়াও পেকটিন টক্সিনের পরিমাণ কমাতে এবং ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদান দূর করতে সাহায্য করে।
অবেলায় আপেল খেলে কি হয়।বিকাল বা রাতের বেলায় আপেল খেলে তা অন্ত্রের বা হজমের কাজে ব্যাঘাত
ঘটায়।এর অর্থ হলো রাতে আপেল খেলে পেটে গ্যাসের
সমস্যা হয় এবং পরে অনেকটা সময় অস্বস্তি সৃষ্টি করে।আপেলের জৈব এসিড স্বাভাবিকের তুলনায় পাকস্থলীর এসিডকে বাড়িয়ে তুলে এবং অন্ত্রের ক্রিয়ায় সাহায্য করে।তাই সকালে ও দুপুরে খাবারের আগে নাস্তা হিসেবে আপেল খাওয়া উচিত।
0 Comments